দেশে সিএএ, এনআরসি, এনপিআরের প্রয়োজন নেই, ভারতবাসীকে খোলা চিঠি শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত আমলার

সংশোধনী নাগরিকত্ব আইন হোক বা এনআরসি কিংবা এনপিআর, কেন দেশে এর প্রয়োজন নেই তার কারণ উল্লেখ করে ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখলেন দেশের অবসরপ্রাপ্ত শতাধিক আমলা। বৃহস্পতিবার লেখা এই চিঠিতে সই রয়েছে দেশের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম সরন, দিল্লির প্রাক্তন উপরাজ্যপাল নাজিব জং, জহর সরকার, হর্ষ মান্দের প্রমুখের।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার যতই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি এবং এনপিআরকে আলাদা বলে উল্লেখ করার চেষ্টা করুক না কেন, আদতে তিনটি জিনিসই একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এবং এ কারণেই তাঁরা এর বিরোধিতা করছেন। গত ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন ওই প্রাক্তন আমলারা। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের এই নয়া আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আগত ছ’টি বিভিন্ন ধর্মের অ-মুসলিম শরণার্থীকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তীব্র আন্দোলন।
মোট ১০৬ জন আমলার সই সংবলিত এই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের প্রতি তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের এনপিআরের সঙ্গে ২০২১ সালের জনগণনার কোনও সম্পর্ক নেই। যেখানে ২০১০ সালের ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারে কারও বাবা-মায়ের জন্মস্থান, জন্ম তারিখ চাওয়া হয়নি, নয়া এনপিআরে সেটাই চাওয়া হচ্ছে। তাই যাঁরা এই তথ্য দিতে পারবেন না, তাঁদেরই ‘সন্দেহজনক নাগরিক’ বলে চিহ্নিত করা যাবে। সেখানেই তাঁদের আপত্তি বলে জানিয়েছেন আমলারা।
প্রাক্তন আমলারা মনে করেন, গত সাত দশকে দেশের জনগণনার পরিসংখ্যানে কোনও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষিত হয়নি। তাই দেশজুড়ে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ খুঁজে বেড়ানোটা অপ্রয়োজনীয়। তাছাড়া এনপিআরে প্রস্তাবিত অর্থব্যয়েরও বিরোধিতা করে চিঠিতে লেখা হয়, দেশের সিংহভাগ নাগরিকের কাছেই আধার কার্ড রয়েছে। তাই এনপিআর করাটা অমূলক। তাছাড়া এনপিআর চালু করতে গেলে বড় ধরনের দুর্নীতিরও আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, অসমের এনআরসি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে চিঠিতে লেখা হয়েছে, যেখানে বিজেপি সরকারই এনআরসি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তা নিয়ে ধন্দ প্রকাশ করছে, তা আসল নাগরিকের স্বার্থে কতটা কাজ করবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়।
এনআরসি ও এনপিআর একটুই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সমাজে বৈরিতা তৈরি করতে পারে বলে ওই চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে সরকার পরস্পরবিরোধী কথা বলছে।

Comments are closed.