৮১ শতাংশ কোটিপতি বিধায়কের বিহারে ব্যতিক্রম সিপিআইএমএলের মেহবুব আলম, জিতলেন সর্বাধিক ব্যবধানে, চিনে নিন ভাঙ্গাচোরা ঘরে বসে রেকর্ড গড়া মানুষটিকে

ছেলেকে কাঁধে চাপিয়ে রাস্তার ধার বরাবর হাঁটছেন এক ব্যক্তি, একটু পিছনে ঝোলা হাতে স্ত্রী। এই দৃশ্যে নজরে পড়ার মত কিছু পাচ্ছেন? কিন্তু যদি শোনেন, ইনি এবার বিহার ভোটে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে জেতা বিধায়ক। অবাক হবেন তো?

তিনি মেহবুব আলম। সিপিআইএমএল লিবারেশনের প্রার্থী হিসেবে বাংলার সীমানা লাগোয়া কাটিহার জেলার বলরামপুর থেকে টানা দ্বিতীয়বার জিতলেন তিনি। এই জয় একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত তাঁর জয়ের ব্যবধান সর্বাধিক। দ্বিতীয়ত, তিনি বিহারের সবচেয়ে গরিব বিধায়ক যিনি টানা দু’বার জয় পেলেন।

দেশের সবচেয়ে গরিব রাজ্য বিহারে এবার জয়ী ৮১ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি। কোটিপতি বিধায়কদের ভিড়ে স্পষ্টতই বেমানান মেহবুব থাকেন একটি ঝুপড়িতে। বারবার ভোটে জিতেও ঝুপড়ির হাল ফেরেনি। অন্য বিধায়করা যেখানে নামীদামী গাড়িতে চেপে নির্বাচনী কেন্দ্র ঘুরতে অভ্যস্ত সেখানে রাজ্যে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে ভোট জিতেও সেই এগারো নাম্বারই ভরসা মেহবুবের। এখনও বর্ষায় ঘরের চাল দিয়ে জল পড়ে। 

এবার লিবারেশনের মেহবুব জয় পেয়েছেন ৫৩,৫৯৭ ভোটে, যা রাজ্যে সর্বাধিক। হারিয়েছেন বিজেপি-জেডিইউ সমর্থিত বিকাশশীল ইনসান পার্টির (VIP) প্রার্থীকে। মেহবুব আলম পেয়েছেন ১,০৪,৪৮৯ টি ভোট, অন্যদিকে VIP প্রার্থী থেমে যান ৫০,৮৯২ ভোটে। 

জয়ের খবর পেতেই ভাঙ্গাচোরা বাড়ির চৌকিতে বসা মেহবুবকে তাঁর ছেলে মালা পড়িয়ে দিচ্ছে, সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে।  

এলাকায় মেহবুব আলমের পরিচিতি আজ থেকে না। মালের (বিহারে সিপিআইএমএল লিবারেশনের চলতি নাম)  মেহবুব আলমকে যে কোনও দরকারে পাওয়া যায়। তাই ২০১৫ সালে যেমন হাসতে হাসতে জিতেছেন, এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। এবারের তাৎপর্য জয়ের ব্যবধান। যা গোটা রাজ্যেই সর্বাধিক।

মেহবুব বলছেন, মানুষের কাজের দায়িত্বকে নিজের সম্পত্তি বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করার রাজনীতি তিনি শেখেননি। তাঁর কাছে বামপন্থাই একমাত্র পথ। তাই ভোটে মিটতেই হাজার আলোর ঝলকানির মধ্যেও অন্ধকারে পড়ে থাকা গরিব, প্রান্তিক মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে ছুটছেন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে জেতা বামপন্থী বিধায়ক, সঙ্গী সেই লাল ঝাণ্ডা। 

Comments are closed.