বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়েছেন, তালে-বেতালে পাশে থেকেছেন সত্যজিতের, সিনেমাও যেন হার মানায় সত্যজিৎ-বিজয়ার প্রেম

বাংলা আর বাঙালির গর্বের তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিভূতিভূষণের পথে পাঁচালিকে বাস্তবের প্রেক্ষাপটে রূপ দেওয়া অস্কার জয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। কিন্তু কালজয়ী এই মানুষটির বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার পিছনে যাঁর সবচেয়ে বড়ো অবদান ছিল তিনি হলেন বিজয়া রায়।

যার জন্য সত্যজিৎ রায়ের এত খ্যাতি সেই ‘পথের পাঁচালি’র শ্যুটিং অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। স্বামীর এই অসহায় অবস্থায় গায়ের গয়না খুলে দিয়েছিলেন বিজয়া রায়। এতো ছিল সামান্য উদাহরণ। সত্যজিতের ছবির চরিত্রকে বাস্তব রূপ দানে অনেকাংশেই কৃতিত্ব ছিল তাঁর স্ত্রীর। সারাটা জীবন ধরে স্বামীর প্রতিটি তালে-বোলে-ঠুমরিতে যথাযথ সঙ্গত করে যিনি মহান ওই মানুষটির জ্যোতি আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিজয়া রায়।

দীর্ঘ ৮ বছর প্রেমের পর পরিবারের অমতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় এবং বিজয়া রায়। যদিও পরে পরিবারের সম্মতি লাভ করেন দম্পতি। আজকালকার মতো ভালবেসে বিবাহ, এই বিষয়টি সেই সময় ততটাও প্রচলিত ছিল না। তাই সাংসারিক জীবনে দুই পরিবারের তরফ থেকেই নানা রকম সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছিল তাঁদের।

জানা যায়, বিজয়া রায়ের পিসতুতো ভাই ছিলেন সত্যজিৎ রায়। শুধু তাই নয়, বয়সেও ছোট ছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু উপায় কী! কোনও কালেই বয়েসের ব্যবধান ভালবাসার মাঝে কাঁটা হতে পারেনি। তাই চুপিসারেই রেজিস্ট্রি ম্যারজ করেন তাঁরা। গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন বিজয়ার বোনের বাড়িতে ১৯৪৯ সালের ২০ শে অক্টোবর।

ঘরোয়া অনুষ্ঠানেই তাঁদের সামাজিক বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। সত্যজিত-বিজয়ার বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন সময়ের খ্যাতিনামা অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুর। ১৯৪৯ এর ৩ মার্চ ফের কলকাতায় ব্রাহ্ম মতে বিয়ে হয়।

সামাজিক প্রয়োজনেই রেজিস্ট্রি বিয়ের কথা গোপন করে রেখেছিলেন তাঁরা। বিজয়া রায় এপ্রসঙ্গে তাঁর আত্মজীবনীতে পরিহাস করে লিখেছিলেন, যেখানে একবার বিয়ে হওয়ারই কোনও সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে দু’বার হল। বিজয়া পরবর্তীকালে নিজেদের বৈবাহিক জীবনের বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন খোলাখুলি।

তবে জানা যায় ‘অপু ট্রিলজি’ খ্যাতি অর্জন করার পর তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের কথা বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের কাছে স্বীকার করেছিলেন মানিক। সেই সময় তিনি পাশে পেয়েছিলেন পারিবারিক বন্ধু  নশো বাবুকে। অবশেষে পরিবার-পরিজনকে মানিয়ে ১৯৪৯ এর ৩রা মার্চ আবার বাঙালি হিন্দুদের সকল আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাঁদের।

সত্যজিতের ঘনিষ্ঠদের থেকে জানা যায়, পথের পাঁচালীর সময় থেকেই ছায়ার মতো সত্যজিৎ রায়কে সঙ্গ দিয়ে এসেছেন বিজয়া।

Comments are closed.