কার্গিল যুদ্ধে বাজিমাত করা মিরাজ ২০০০ দিয়েই পাক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় বায়ুসেনা, কী বিশেষত্ব এই ফরাসি বিমানের
মঙ্গলবার ভোররাতে পাকিস্থানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোট এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদ ও চাকোঠিতে এয়ার স্ট্রাইকের পর এখন শিরোনামে মিরাজ যুদ্ধ বিমান। ভারতের বিভিন্ন বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে পরপর ১২টি মিরাজ ২০০০ বিমান জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে টার্গেট করে সীমান্ত পেরিয়ে উড়ে যায়। অপারেশন সফল করে আবার ফিরেও আসে সেনা ঘাঁটিতে। কিন্তু এই মিরাজ ২০০০ বিমানে এমন কী রয়েছে যা বায়ুসেনার আস্থা জিতে নিতে সক্ষম হল? কী বিশেষত্ব মিরাজ যুদ্ধ বিমানের?
মাল্টিরোল, সিঙ্গল ইঞ্জিন, ফোর্থ জেনারেশন এই যুদ্ধ বিমান তৈরি করেছে ফ্রান্সের দাসোঁ অ্যাভিয়েশন। লেজার গাইডেড বোমা ফেলায় এই বিমান অব্যর্থ। ১৯৮০ সালে ফ্রান্স ও ভারতের মধ্যে এই ফাইটার জেট তৈরির চুক্তি হয়। প্রথমে ১৫০ টির বেশি এয়ারক্রাফট কেনার আলোচনা চললেও শেষ পর্যন্ত ৪০ টি এয়ারক্রাফট কেনা হয়। পরে ১৯৮৬ সালে আরও ৯টি ‘মিরাজ ২০০০’ কেনে ভারত।
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ‘মিরাজ ২০০০’। আর তাতেই বাজিমাত। খারাপ আবহাওয়ায় দুর্গম এলাকায় বায়ুসেনার ‘অপারেশন সফেদ সাগর’ চালানোর সময় মিরাজ ২০০০ যুদ্ধ বিমান নিজের জাত চেনায়। বিশেষ করে কার্গিল-দ্রাস পাহাড়ের টাইগার হিল পুনরুদ্ধারের সময় মিরাজের অভ্রান্ত নিশানায় নাজেহাল হয়েছিল পাক বায়ুসেনা। পরিস্থিতি যাই হোক, নিশানায় নির্ভুল এই ফাইটার জেটের পারফরমেন্সে খুশি হয়ে আরও ১২৬ টি জেট কেনার পরিকল্পনা করে ভারত। কিন্তু বর্তমানে যে মিরাজ ভারতের হাতে আছে তা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আগের মিরাজের থেকে অনেকটাই উন্নত। মিরাজের আধুনিকীকরণে ২০১১ সালে ২.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয় দাসোঁর সঙ্গে।
মঙ্গলবার ভোররাতে বালাকোটে হামলা চালানো মিরাজ ২০০০ গুলিতে রয়েছে নাইট ভিশন গুগল-কম্প্যাটিবল গ্লাস ককপিট, অ্যাডভান্সড আইডেন্টিফিকেশন ফ্রেন্ড অথবা ফো সিস্টেম, অ্যাডভান্সড মাল্টি মোড, মাল্টি লেয়ারড রেডার সবচেয়ে বড় কথা এতে রয়েছে অ্যাডভান্সড বিয়ন্ড ভিস্যুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর)। অর্থাৎ সাধারণভাবে যা চর্মচক্ষু পর্যবেক্ষণ করতে পারে না, তাও ধরা পড়বে মিরাজের রেডারে।
শুরুতে মিরাজ ২০০০ ছিল একটি হালকা ওজনের যুদ্ধ বিমান। কিন্তু পরে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাকে মাল্টিরোল এয়ারক্রাফ্ট হিসেবে তৈরি করা হয়। দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের মতে, মিরাজে সিঙ্গল সিটার কিংবা টু সিটার, দু’ধরনের ব্যবস্থাই করা যায়। মিনিটে ৬০ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠতে পারে মিরাজ, পাশাপাশি আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, মিরাজের নিশানা কখনওই ফসকায় না বলে দাবি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। ভারতীয় বায়ুসেনা ছাড়াও মিরাজ ২০০০ যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে চিন, ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বায়ুসেনা।
Comments are closed.