সৃজিত: গুমনামীর বিষয় বুঝেও না বুঝে যিনি অন্যকে মূর্খ বা শয়তান বলেন, তাঁর আই কিউ সদ্যোজাত অ্যামিবার থেকেও কম
সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত গুমনামী ছবি নিয়ে কিছুদিন আগেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন নেতাজি পরিবারের সদস্য এবং অধ্যাপক সুগত বসু।thebengalstory.com এ এক ইন্টারভিউয়ে সুগত বসু বলেছিলেন, ‘উত্তর প্রদেশের ক্রিমিনাল গুমনামীকে নিয়ে যাঁরা ছবি বানিয়েছেন, তাঁরা হয় মূর্খ নয় শয়তান’। এবার সুগত বসুর বক্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: আপনার নতুন সিনেমা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন, গুমনামী বাবার কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তিই নেই, পুরোটাই গুজব। নেতাজির প্রতি বাঙালির আবেগ উস্কে একটা তাৎক্ষণিক সাফল্যের জন্য আপনি এই সিনেমা বানিয়েছেন।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়: যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা হয় অবুঝ, নয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইচ্ছে করে বুঝতে চাইছেন না। প্রথমত, আমার ছবি গুমনামী বাবা নিয়ে নয়। আমার ছবির আধার মুখার্জি কমিশনের বৈঠক যা, ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ঘটা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেখানে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের তিনটি সম্ভাব্য থিওরি নিয়ে আলোচনা হয়। প্লেন ক্র্যাশে মৃত্যু, রাশিয়াতে মৃত্যু এবং ভারতবর্ষে এসে গুমনামী বাবা হিসেবে মৃত্যু। আমার ছবি দুটি চরিত্রের মাধ্যমে এই কমিশনে হওয়া তর্কাতর্কি ও সাক্ষ্য-প্রমাণকেই তুলে ধরে। এবং এই কারণেই আমাদের কঠিন সেন্সর বোর্ড যে শুধু কাঁচি না চালিয়ে ইউ সার্টিফিকেট দিয়েছে এই ছবিকে তাই নয়, এর নিরপেক্ষ অ্যাপ্রোচেরও প্রশংসা করেছে।তাই শুধু শুধু ছবিটি না দেখে, ভালো করে ছবির বিষয় না বুঝে, বা কিছু ক্ষেত্রে বুঝে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্ক খাঁড়া করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: নেতাজির পরিবারের সদস্য অধ্যাপক সুগত বসু অভিযোগ করেছেন, গুমনামী বাবাকে নেতাজি সাজিয়ে যিনি সিনেমা করেছেন তিনি হয় মূর্খ, নয়তো শয়তান।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়: কী বলব? যাঁরা গুমনামীর বিষয়বস্তু এতবার এত জায়গায়, পোস্টারে, টিজারে, ইন্টারভিউতে পড়ার পরেও ‘বুঝতে পারছেন না’ তাঁরা মূর্খ বা শয়তান কোনওটাই নয়, কেবল তাঁদের ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট (আই কিউ) সদ্যোজাত অ্যামিবার থেকেও কম। আর নেতাজির প্রেক্ষিতে গুমনামী বাবা নিয়ে আলোচনা যদি মূর্খামি, শয়তানি বা অবমাননা হয়, তাহলে সেই তালিকায় আছেন ললিতা বসু, সুরেশ বসুর মেয়ে, আইএনএ ভেটেরান পবিত্র মোহন রায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী লীলা রায়, কলকাতা এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট, সরকার গঠিত মুখার্জি কমিশন, সাহায় কমিশন এবং প্রচুর সংবাদমাধ্যম। তাহলে এনারাও কি মূর্খ বা শয়তান ডঃ বসুর মতে?
প্রশ্ন: সুগত বসু আর একটা অভিযোগ করছেন, চিটফান্ড বন্ধ হয়ে গেছে বলে, সিনেমা হিট করাতে গুজবের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে অনেক পরিচালককে।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়: ডঃ বসুর জন্য খারাপ লাগছে, কারণ বুঝতে পারছি উনি দেশের কোনও খোঁজখবরই রাখেন না। শেষ দশ বছত যাবৎ পুজোয় আমার ছবি মুক্তি পেয়েছে, এবং প্রত্যেকবারই তা ব্লকবাস্টার হয়েছে। অর্থাৎ, একশো শতাংশ সাকসেস রেট। কাজেই সুগতবাবু যেমন আর সি মজুমদার নন, তেমন সৃজিত মুখার্জিরও কুরোসোয়া না হওয়া সত্ত্বেও পুজোয় বক্স অফিস সাফল্যের জন্য কোনও মিথ্যাচার বা গুজবের প্রয়োজন হয় না।
প্রশ্ন: হঠাৎ নেতাজিকে নিয়ে বা এত বছরের পুরনো একটা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কেন সিনেমা করলেন?
সৃজিত মুখোপাধ্যায়: দেখুন, ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে আমি আগেও বহু সিনেমা করেছি। রাজকাহিনী, জাতিস্মর, আর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হল, এক যে ছিল রাজা, যেখানে ভাওয়াল সন্ন্যাসীর কোর্ট কেসের মতো জটিল রহস্যকে আমি আইনের নিরপেক্ষ পরিকাঠামোর মধ্যে তুলে ধরে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। কাজেই এটা মোটেও নতুন কিছু নয়, বা এর মধ্যে কোনও তাৎক্ষণিক চমকও নেই।
কী বলেছিলেন ডক্টর সুগত বসু, পড়ুন
Comments are closed.