তিব্বতের ইতিহাস মূলত তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস এবং বিবর্তনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারত ও চীনের মতো দু’টি সুপ্রাচীন সভ্যতার মধ্যবর্তী স্থানে তিব্বতী সভ্যতার বিকাশ ঘটে। তিব্বতকে ঘিরে রেখেছে সুউচ্চ বরফ ঢাকা পর্বত শ্রেণী। যার মধ্যে উত্তরে কুয়েনলুঙ পর্বতমালা এবং দক্ষিণে হিমালয়। তিব্বতের সাহিত্য, ভাষা, ধর্ম, ও সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে গবেষণা করে চলেছেন অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠক। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিব্বতী বিভাগে অধ্যাপনার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৮ সালে পেয়েছেন ‘দেশিকোত্তম’। বর্তমানে ৯৪ বছর বয়সী সুনীতিবাবু শান্তিনিকেতনে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। পূর্বপল্লীর বাড়িতে ছিমছাম পরিবেশে আজও তিব্বত নিয়ে গবেষণায় মগ্ন ১০০ ছুঁতে চলা এই অধ্যাপক। ‘তিব্বত’ শিরোনামে বইও লিখেছে তিনি। বর্তমানে শান্তিনিকেতনে নিজের লেখা বইয়ের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশের কাজে ব্যস্ত তিনি।
নিজের শান্তিনিকেতনের বাসভবনে বসে এই অশীতিপর অধ্যাপক জানালেন, ‘তিব্বতকে জানতে গেলে চীনকেও জানতে হবে। খ্রীস্টিয় প্রথম শতক থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের অবিচ্ছেদ্য সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। তিব্বতি ভাষা থেকে ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার বই। সাহিত্য, ব্যাকরণ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্র বিভিন্ন বিষয়ে অনুদিত হয়েছে গ্রন্থ। এমনকী বহু প্রাচীন কাল থেকেই তিব্বতি ভাষায় প্রকাশিত হয়ে আসছে নানা ধরনের সংবাদপত্র’। তিব্বতি হরফে এই সব পত্র-পত্রিকার সুবিশাল সংগ্রহ রয়েছে অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠকের সুবিশাল নিজস্ব সংগ্রহে। আজও তিব্বত নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষগবেষকদের মধ্যে রয়েছে নিরন্তর কৌতুহল। অতীশ দীপঙ্করের মত বৌদ্ধ পন্ডিত বা পদ্মসম্ভবের মত বিখ্যাত তন্ত্র সাধক তিব্বতের দুর্গম পথে যাত্রা করেছিলেন। সেই উত্তরাধিকার এই ২১ শতকেও নিজের গবেষণার মধ্যে বহন করে চলেছেন ৯৪ বছর বয়সী অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠক।
এশিয়াটিক সোসাইটির সিনিয়ার ক্যাটালগার জগৎপতি সরকার thebengalstory.com কে জানালেন ‘এক অসাধারণ গবেষক অধ্যাপক সুনীতি কুমার পাঠক, তিব্বতি তথা বৌদ্ধ ধর্মের গবেষণাকে আজও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার এবং দেশিকোত্তমসহ নানান স্বীকৃতি। এশিয়াটিক সোসাইটির সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত তিনি, তাঁকে স্বর্ণ পদকেও সন্মানিত করা হয়েছে। তিব্বত ও বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই এক মাইলস্টোন তিনি’।