ইয়েচুরির কাছে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়তে চাইলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিধানসভার ভোটের জন্য দ্রুত বদল আনতে বললেন রাজ্য নেতৃত্বে

অবশেষে কি রাজ্য সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বে বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল?
দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কাছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের পর সূর্যকান্ত মিশ্র আর রাজ্য সম্পাদকের পদে থাকতে চাইছেন না। তিনি চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী প্রজন্মের হাতে নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দিতে, যাতে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন সাংগঠনিক প্রধান যথেষ্ট সময় পান। যদিও রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে সূর্যকান্ত মিশ্রর সরে যাওয়া নিয়ে সিপিএমের অন্দরে এখনও পর্যন্ত কোনও স্তরেই সরকারিভাবে আলোচনা শুরু হয়নি।
গত ৪ ই জুন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসেছিল সিপিএমের রাজ্য কমিটির মিটিং। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর সেটাই ছিল সিপিএমের রাজ্য স্তরে প্রথম পর্যালোচনা বৈঠক। সেই বৈঠকেই রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাওয়ার একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সম্পাদকের জবাবি ভাষণে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘আমার বয়েস হয়েছে, অবসর নিতে হলে খুশিই হব। লেখালেখি করব, পড়াশোনা করব। গ্রামের বাড়িতে যাব, পার্টির কাজ করব’। সেদিন কেন হঠাৎ রাজ্য কমিটির সদস্যদের সামনে নিজের অবসরের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তিনি?
সূত্রের খবর, সেদিনই রাজ্য কমিটির মিটিং চলাকালীন সূর্যকান্ত মিশ্র আলাদাভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কাছে রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বলেন, ২০২১ বিধানসভা ভোটের কথা ভেবে এখনই সংগঠনে রদবদল দরকার। দেরি না করে সূর্যকান্ত মিশ্র সেই মুহূর্তেই রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়তে চাইছিলেন বলে সূত্রের খবর। সীতারাম ইয়েচুরি তখন সূর্যকান্ত মিশ্রকে বলেন, এখনই তাড়াহুড়ো করে এ কথা ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই। নেতৃত্বে বদলের বিষয়টা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হওয়া দরকার। তার জন্য কিছুটা সময় লাগবে।
সিপিএম সূত্রে খবর, ৪ ই জুনই সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়ার যে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তাতে তখনই রাজি না হলেও সংগঠনের শীর্ষ স্তর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত ব্যাপক বদলের ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। তবে সেটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে করা দরকার বলে রাজ্য সম্পাদককে জানিয়েছেন তিনি। ঠিক হয়েছে, দলের সংগঠন নিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে। রাজ্য কমিটির বৈঠকের দিনই ঠিক হয়েছিল, এ রাজ্যের সংগঠন নিয়ে পর্যলোচনা করার বিষয়টি ৭ থেকে ৯ জুন দিল্লিতে পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে। সেই অনুযায়ী রবিবার শেষ হওয়া পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব পেশ হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সংগঠনের কোন স্তরে কী ধরনের বদল বা মেরামতি দরকার তা নিয়ে খুব দ্রুত আলোচনা এবং পর্যালোচনা শুরু করবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। এর জন্য দরকারে রাজ্য কমিটির বর্ধিত সভাও ডাকা হতে পারে। তার আগে অবশ্য জেলা স্তরে আলোচনা শুরু হবে। সিপিএম নেতৃত্ব চাইছে অগাস্ট মাসের মধ্যে সংগঠনের রদবদল সংক্রান্ত বিস্তারিত পর্যালোচনা সেরে ফেলতে, যাতে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে রাজ্য সিপিএমের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করা যায়।
সূত্রের খবর, সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছেন, এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দলের রাজ্য সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে একাধিক রদবদল করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে রাজ্য সম্পাদক বদলের বিষয়ও। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হবে বয়েস এবং ভাবমূর্তি। ২০১৫ সালে কলকাতার রাজ্য সম্মেলনে দলের রাজ্য সম্পাদকের পদে এসেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তারপর ২০১৮ সালের রাজ্য সম্মেলনে তিনি ফের রাজ্য সম্পাদক হন। তার দেড় বছরের মধ্যে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সূর্যকান্ত মিশ্রর সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দলের গৃহিত হলে তা হবে রীতিমতো নজিরবিহীন ঘটনা।

Comments are closed.