৪০ শতাংশেরও বেশি মহিলা প্রার্থী দিয়ে দেশে ১ নম্বরে তৃণমূল, বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমের তালিকায় মহিলা মাত্র ১২-১৪ শতাংশ

কথায় বলে, নারীরা অর্ধেক আকাশ। সমাজ থেকে শুরু করে অর্থনীতি, রাজনীতি সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষ-নারী সমানাধিকারের দাবি রয়েছে সবকটি রাজনৈতিক দলের অগ্রাধিকারের তালিকায়। কিন্তু স্বাধীনতার সাত দশক পর ভারতে নারী-পুরুষ সমানাধিকার আজও আকাশ-কুসুম কল্পনার স্তরেই বিরাজমান। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকা।
এখনও পর্যন্ত দেশের যত দল যতজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহিলা প্রার্থী রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে (৪০.৫ শতাংশ)। দু’নম্বরে নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি। বাকি সব দলের প্রার্থী তালিকায় মহিলার সংখ্যা নামমাত্র।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের দাবি করে বিজেপি। বিজেপির জাতীয় নির্বাচন কমিটি বেশ কয়েক দফায় মোট ৩৭৪ জনের তালিকা ঘোষণা করেছে। তাতে মহিলার সংখ্যা মাত্র ৪৫, অর্থাৎ সাকুল্যে ১২ শতাংশ।
এর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপি সবচেয়ে বেশি মহিলা প্রার্থী দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এরাজ্যে দেবশ্রী চৌধুরী, শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, লকেট চট্টোপাধ্যায়, মাফুজা খাতুন এবং ভারতী ঘোষকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এরপরেই আছে উত্তর প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র। সেখানে ৩ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।
আরেক জাতীয় দল কংগ্রেসের কী অবস্থা? এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে ৩৪৪ টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। তার মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৪৭, অর্থাৎ ১৩.৭ শতাংশ। বিজেপির চেয়ে সামান্য বেশি।
আরেক জাতীয় দল সিপিএম। সারা দেশে তিন দফায় মোট ৭১ টি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে সিপিএম। তার মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন অর্থাৎ ১৪.০৮ শতাংশ। এরাজ্যে নন্দিনী মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা ঘোষ, দেবলীনা হেমব্রম, গার্গী চট্টোপাধ্যায়, রমা বিশ্বাস, মাকসুদা খাতুন সিপিএমের মহিলা প্রার্থী।
এবার দেখা যাক রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা। গত ১২ ই মার্চ রাজ্যের ৪২ আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ১৭। যা শতাংশের বিচারে বাকিদের বহু পিছনে ফেলে দিয়েছে। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ৪০.৫ শতাংশই মহিলা। তালিকা ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, সবাই ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের কথা মুখেই কেবল বলেন, আমরা প্রার্থী তালিকায় প্রচুর সংখ্যায় মহিলাদের এনে সেই কথাই কাজে করে দেখালাম। মমতার দাবি, ২০১৪ সালে তাঁর দলের প্রার্থী তালিকায় ৩৫ শতাংশ ছিলেন মহিলা, এবার আরও বেশি সংখ্যক মহিলাকে দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া হল।
জাতীয় স্তরে মহিলাদের সংখ্যার বিচারে তৃণমূলের কাছাকাছি আছে একমাত্র ওড়িশার বিজু জনতা দল। তারা ১৯ জনের তালিকা ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে মহিলাদের ৭ টি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজেডির প্রার্থী তালিকায় মহিলাদের সংখ্যা শতকরা ৩৬.৮ জন। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্যুইট করেছিলেন নবীন পট্টনায়ক।
দেশের সংসদে মহিলাদের যোগদানের নিরিখেও উপ মহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ পিছিয়ে ভারত। ভারতের ১৬ তম লোকসভায় মহিলাদের সংখ্যা ছিল ১২.৬০ শতাংশ। এমনকী এ বিষয়ে ভারতকে টেক্কা দিয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্থানও। আর এক প্রতিবেশী বাংলাদেশের সংসদে মহিলাদের যোগদানের হারও ভারতের চেয়ে অনেকটাই বেশি।

Comments are closed.