রায়গঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদে বিরোধী ভোট কাটাকাটির ফলে প্রথম ৩ দফার ১০ কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল জিততে পারে ৯ টি, হাড্ডাহাড্ডি দার্জিলিং
১১ ই এপ্রিল রাজ্যের যে দুই আসনে ভোট হল তার প্রবণতা, ২০১৬ বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পাটিগণিতের হিসেব এবং গত এক-দেড় বছরে বাংলায় রাজনীতির পরিবর্তিত রসায়ন দেখে কি আন্দাজ করা সম্ভব, প্রথম ৩ দফায় যে ১০ টি আসনে ভোট হচ্ছে, তাতে কোন দল কত আসন পেতে পারে?
প্রথম দফায় কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে ভোট হয়েছে ১১ ই এপ্রিল। আগামী ১৮ ই এপ্রিল ভোট রয়েছে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং রায়গঞ্জ কেন্দ্রে। তার পরের দফায় আগামী ২৩ শে এপ্রিল ভোট হতে চলেছে বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে।
এই ১০ টি কেন্দ্রের মধ্যে গত ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছিল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং বালুরঘাট আসনে। কংগ্রেস জিতেছিল মালদহের ২ টি এবং জঙ্গিপুর আসন। সিপিএম জিতেছিল রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসন, বিজেপি জিতেছিল দার্জিলিং।
রাজ্যে শেষ যে বড় নির্বাচন হয়েছে, অর্থাৎ ২০১৬ সালে বিধানসভা, তার ফলাফলের নিরিখে স্রেফ পাটিগণিতের অঙ্কে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ৭ টি আসনে, কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৩ টি আসনে। কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা আসনগুলি হল মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ এবং জঙ্গিপুর। এবার যদি সিপিএম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হোত (যা ২০১৬ সালে হয়েছিল), তবে রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসনে তারাই এগিয়ে থাকতো। কিন্তু তা না হওয়ায় এই দুই কেন্দ্রেই পৃথকভাবে সিপিএম এবং কংগ্রেসের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল। এমনকী গত লোকসভায় বিজেপির জেতা দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রেও একক বৃহত্তম দল তৃণমূল।
যদিও এই পাটিগণিতের হিসেব মেনে কখনই তিন বছর বাদে কোনও নির্বাচন হওয়ার কথা নয়। তা হবে নির্বাচনের মুহূর্তের কিছু ইস্যু, কিছু বিশেষ রসায়ন এবং নির্বাচনের দিন বিকেল পর্যন্ত সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে।
এই সব কিছুকে মাথায় রেখে বলা যায়, ২০১৪ সালের মতোই কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার আসন জিততে চলেছে তৃণমূল। ১১ ই এপ্রিল ভোটের দিন দুপুরের পর থেকে এই দুই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বার্লার চেহারা এবং শুক্রবার কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসে বিজেপির আচরণ, দুইই স্পষ্ট আন্দাজ দেয়, তারা হারছে।
এই ১০ টি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দার্জিলিং এবং সবচেয়ে রহস্যময় আসনের নাম রায়গঞ্জ। দার্জিলিং লোকসভার অন্তর্গত চোপড়া বিধানসভায় তৃণমূল কত লিড নেবে এবং শিলিগুড়ি বিধানসভায় কেমন ভোট পাবে তার ওপর এই কেন্দ্রের ফল অর্ধেক নির্ভর করছে । বাকি অর্ধেক পাহাড়ের তিন বিধানসভা দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংয়ের হাতে।
রায়গঞ্জে এই মুহূর্তে ভোটের যে তীব্র মেরুকরণ তৈরি হয়েছে তার ডিভিডেন্ড সম্ভবত পেতে চলেছে তৃণমূল। আবার বালুরঘাট আপাত নিরীহ আসন হলেও, অন্তর্দলীয় ঝামেলা (যা ২০১৬ সালে তৃণমূলকে হারিয়েছিল অন্তত ৩ টি কেন্দ্রে) কাটিয়ে সেখানেও জয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই আশাবাদী তৃণমূল নেতৃত্ব।
মালদহের দুটি এবং জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে এবার এক বিচিত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ৪ টি কেন্দ্রেই বাম-কংগ্রেস-বিজেপির ভোট কাটাকাটির সরাসরি সুবিধে পেতে চলেছে তৃণমূল। এবং কংগ্রেসের এই দুই জেলায় গ্রাম থেকে বুথ পর্যন্ত সংগঠনের যে ঘাটতি ছিল তাও পঞ্চায়েত ভোটের পর কাটিয়ে উঠেছে রাজ্যের শাসক দল। রায়গঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদ, মোট ৬ টি হারা কেন্দ্রের দায়িত্ব এবার লোকসভার কথা মাথায় রেখে শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত এই ৬ টি আসনের যা পরিস্থিতি, তাতে এর মধ্যে ৫ টি আসনই তৃণমূল প্রায় জেতার জায়গায় চলে এসেছে বলে মনে করছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী এবং এক সময় জঙ্গলমহলে সংগঠন গড়ে তোলা শুভেন্দু অধিকারী।
সব মিলে এই ১০ টি কেন্দ্রে (প্রথম তিন দফায় যেখানে ভোট) তাতে গত লোকসভায় তৃণমূল যে ৪ টি আসন জিতেছিল, এবার সেখানে সংখ্যাটা বেড়ে ৯ এ পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর একটা কারণ যেমন বাম-কংগ্রেস-বিজেপির ভোট কাটাকাটি, দ্বিতীয় কারণ পঞ্চায়েতের পর তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি। আর সাংগঠনিক শক্তি যে ভোটের দিন কত গুরুত্বপূর্ণ তা প্রথম দফার ভোটের পরই বুঝছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
Comments are closed.