বৃহস্পতিবার দলীয় সাংসদ, বিধায়কদের বৈঠকে কী বার্তা দেবেন মমতা? শোভনকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে তৃণমূলের অন্দরে

দলের সমস্ত সাংসদ, বিধায়ককে নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। উৎসবের মরসুম শেষ। এবার পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় দল। আগামিকাল বিকেল ৩ টেয় তৃণমূল ভবনে ওই বৈঠকে নেত্রী কী বার্তা দেন তা নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে।
১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। এই অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার কথা। স্বাভাবিকভাবেই ওই আলোচনায় এনআরসি প্রসঙ্গ উঠবে। ওই বিল ও এনআরসি নিয়ে দলীয় সাংসদদের লোকসভা অধিবেশনে কী বক্তব্য হবে, নেত্রী কাল তা বুঝিয়ে দেবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। ১৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নেবেন। তার আগেই অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। রায় বেরনোর পর কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, এই রাজ্যে তার কীরকম প্রভাব পড়বে, সেসব নিয়েও দলীয় বৈঠকে কাল কথা হবে। এছাড়া আগামী বছরের প্রথম দিকে কলকাতা কর্পোরেশন সহ বহু পুরসভায় ভোট রয়েছে। নেত্রী চান, এখন থেকেই সেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে। সাংসদ বিধায়কদের সেদিকেও নজর দিতে বলা হবে।
এদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া, নেত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং মন্ত্রী শোভন চ্যাটার্জি কালকের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। শোভনকে ডাকা হবে কি না সে ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বুধবার বলেন, অপেক্ষা করুন কালকেই সব দেখতে পারবেন, জানতে পারবেন। শোভন নিজেও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দল ছেড়ে বান্ধবী বৈশাখী ব্যানার্জিকে নিয়ে দিল্লির সদর দফতরে বিজেপিতে যোগ দিলেও শোভন খুব একটা স্বস্তিতে নেই। বরং প্রথম থেকেই শোভন এবং বৈশাখী তাঁদের নতুন দল সম্পর্কে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে গিয়েছেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই শাসক তৃণমূল শোভনের নিরাপত্তা অনেক কমিয়ে দেয়। তা নিয়ে শোভন তৃণমূলের উপর অভিমান করলেও মুখে কিছু বলেননি। এই অবস্থায় ভাইফোঁটার দিন শোভন বান্ধবীকে নিয়েই সটান মমতার কালীঘাটের বাড়িতে চলে যান, দিদির কাছ থেকে ফোঁটা নিতে। তারপর থেকেই শোভনের তৃণমূলে ফিরে আসা নিয়ে দলের ভিতরে বাইরে নানা জল্পনা শুরু হয়। ওই দিন শোভন- বৈশাখীর সঙ্গে নেত্রী একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন। তারপরেই শোভনের ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা শোভনের তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করেছে। পাশাপাশি তা বিজেপিকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে। কালকের বৈঠকে যোগ দিলে শোভনের দলে ফেরা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উৎসবের মরসুমে গত দেড় মাসে তৃণমূল কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করেনি। নেত্রীর নির্দেশ ছিল, এই সময় মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের উৎসবে সামিল হতে হবে। এবার উৎসবের পালা শেষ। নেত্রী চান, এখন দল পুরোপুরি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেমে পড়ুক। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮ টা আসন দখল করার পর তৃণমূলে চাপ বেড়েছে অনেকটাই। এই চাপ কাটাতে নেত্রী ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের টিমকে নিয়োগ করেছেন। তিনি দলের সামনে একাধিক কর্মসূচি ফেলে তার রূপায়নও করছে। সেগুলি কতটা কী কাজ করেছে, কালকের বৈঠকে তারও পর্যালোচনা করবেন মমতা। ওই বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর থাকবেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

 

Comments are closed.