পিয়ারলেসকে চাম্পিয়ন করেও অন্ধকারে বঙ্গ-ব্রিগেড, দল আই-লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে না খেলায় হতাশা

মাঝে মাত্র কয়েকটা দিন। আর তাতেই হাজার ওয়াটের আলো বদলে গেল ঘন কালো অন্ধকারে। ছয় দশক পর ইতিহাস তৈরি করে এবার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তিন প্রধানের বাইরের দল পিয়ারলেস। ছোট দল হিসাবে পিয়ারলেস-এর উত্থান রূপকথার মতো। আর এই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে মস্ত বড় ভূমিকা পিয়ারলেসের বঙ্গ ব্রিগেডের। মনতোষ চাকলাদার, জিতেন মুর্মু, লক্ষীকান্ত মান্ডি, পঙ্কজ মৌলা, দীপঙ্কর দাস, দিপেন্দু দুয়ারিয়া দুরন্ত ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন করেছেন পিয়ারলেসকে। কিন্তু ছোট দলকে চাম্পিয়ন করে তাঁরা কী পেলেন? শুধু একটা ঝাঁ-চকচকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কি শেষ হয়ে যায় একজন ফুটবলারের চাওয়া পাওয়া?
না বোধহয়। একজন ফুটবলারের কাছে তাঁর ফুটবল জীবনটাই সব। পা থেকে বল চলে গেলেই তাঁর সব শেষ। ঠিক এমনটাই হতে চলেছে পিয়ারলেস-এর বঙ্গ ব্রিগেডের। কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেয়েছিল পিয়ারলেস। কিন্তু পিয়ারলেস ম্যানেজমেন্ট পরিকাঠামোর দোহাই দিয়ে খেলতে রাজি হয়নি। ফলে এই মরসুমে আর কোনও ক্লাব নেই পিয়ারলেসের বাঙালি ফুটবলারদের কাছে।
যাঁদের চাকরি আছে তাঁদের তবু কিছুটা বাঁচোয়া। কিন্তু যাঁদের সেটুকুও নেই, তাঁদের পক্ষে দিন চালানো মুশকিল। যেমন, ব্যান্ডেলের মনতোষ চাকলাদার। দুরন্ত পারফর্ম করা এই স্টপারকে অবশ্য অফার করেছে পিয়ারলেস-এর পরিবর্তে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে সুযোগ পাওয়া ভবানীপুর। সেখানে খেললে তবু কিছুটা সুরাহা হবে মনতোষের। ভবানীপুর অফার করেছে জিতেন মুর্মুকেও। কিন্তু কী হবে লক্ষীকান্ত মান্ডির? মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে নজরে এসেছিলেন লক্ষীকান্ত। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় থেকে ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম তুইমা টোলা বাড়াডি। সেখানেই এক প্রত্যন্ত কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা লক্ষীকান্তের। সাঁওতালি এই যুবক ভেবেছিলেন আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলে বড় দলের নজরে পড়বেন। অন্তত এই কয়েক মাস উপার্জনের পথ থাকবে। কিন্তু তা আর হয়নি। বাধ্য হয়েই আগামী কয়েক মাস গ্রামে চাষের কাজে হাত লাগাতে হবে তাঁকে।
বাঙালি ফুটবলারদের জন্য এর থেকে খারাপ বিজ্ঞাপন আর কী হতে পারে? দুরন্ত পারফরমেন্স করেও উপহার তো দূরে থাক, ভবিষ্যৎটুকু অন্ধকার হচ্ছে বঙ্গ ব্রিগেডের।

Comments are closed.