পাত্রীকে হতে হবে প্রবল দেশপ্রেমী, বিহারের কর্মহীন দাঁতের ডাক্তারের বিয়ের বিজ্ঞাপনের বয়ানে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া

ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে দিতে সংবাদপত্রের পাত্র-পাত্রী কলাম এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সংক্ষেপে নিজের যোগ্যতা এবং চাহিদা জানিয়ে সংবাদপত্রের নির্দিষ্ট কলামে বিজ্ঞাপন দিলেই কেল্লা ফতে, এমন মনোভাব আজও ভারতের গ্রামে-শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ। যুগের পর যুগ ধরে অসংখ্য ভারতীয়র বিবাহ অভিযান সুসম্পন্ন হয়েছে সংবাদপত্রের পাত্র-পাত্রী কলামের হাত ধরে। কিন্তু ভারতে পাত্রী চাইয়ের বিজ্ঞাপনে মাঝেমাঝেই ধরা পড়েছে পুরুষতান্ত্রিকতার কুপ্রভাব। ঠিক যেমন সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি বিয়ের বিজ্ঞাপন। পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপনে নজর কেড়েছে তার ভাষা এবং বয়ান। সেই বিজ্ঞাপন নিয়েই এখন তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।

সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রে পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন বিহারের ভাগলপুরের দাঁতের চিকিৎসক অভিনও কুমার। বিজ্ঞাপনের শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি এখন বেকার। তারপর লেখা হয়েছে এই ব্রাহ্মণ সন্তানের জন্য পরমা সুন্দরী, অত্যন্ত বশংবদ ও বিশ্বস্ত, স্নেহময়, যত্নশীল, সাহসী, শক্তিশালী এবং ধনী পাত্রী চাই। তারপরই রয়েছে আসল ট্যুইস্ট। বিজ্ঞাপনে বিহারের কর্মহীন দাঁতের ডাক্তারবাবু দাবি করেছেন, পাত্রীকে প্রবল দেশপ্রেমী হতে হবে এবং ভারতের সেনাবাহিনী ও ক্রীড়াক্ষেত্রে উৎসাহ রাখতেই হবে। সে যেন হয় একাধারে কঠোর অন্যদিকে স্নেহশীল। পাশাপাশি সন্তান প্রতিপালনে পারদর্শী ও দুর্দান্ত রন্ধন পটিয়সী হতে হবে বিহার অথবা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা কর্মরত পাত্রীকে। তাতেই অবশ্য দাবি মিটছে না। পাত্রীর সঙ্গে দাঁতের ডাক্তারবাবুর সম্পূর্ণ কুণ্ডলী মিলতে হবে এবং ৩৬ টি গুণও মিলতে হবে। তবেই হবে বিয়ে।

আপাত দৃষ্টিতে এই বিয়ের বিজ্ঞাপনে কোনও অন্যায্য দাবি নেই। কিন্তু সমস্যা হয়েছে চাহিদার তালিকা নিয়ে। প্রবল দেশপ্রেমী হওয়া কীভাবে বিয়ের শর্ত হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। তাঁরা বলছেন, বিয়ে কোথায়, এ হল শপিং মলে গিয়ে বাজার করার মতো ব্যাপার! একটি ভোগ্যপণ্য কেনার সময় যেভাবে দাম দস্তুর করা হয়, বিয়ের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কতকটা তেমনই, বলছেন তাঁরা। একদিকে পাত্রীকে পরমা সুন্দরী হতে হবে, আবার সন্তান প্রতিপালনেও দড় হতে হবে। সেনাবাহিনী ও দেশীয় খেলাধুলোয় উৎসাহ রাখার পাশাপাশি দুবেলা চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয়তেও চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পাত্রীকে চাকরি করতে হবে। কারণ বিজ্ঞাপনের একেবারে শুরুতেই পাত্র জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই মুহূর্তে বেকার।

বাড়ির কাজের সঙ্গে করতে হবে ‘সেবা’ও! কী বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আমলা? জানতে ক্লিক করুন

এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। পাত্র যদি বেকার হন, তাহলে তিনি কর্মরত স্ত্রী পাওয়ার বাসনা রাখতেই পারেন। কিন্তু সেজন্য ভাগলপুরের বাসিন্দা দাঁতের ডাক্তারবাবু যা দাবিপত্র পেশ করেছেন, তা নিয়েই এখন রসিকতার প্লাবন। একইসঙ্গে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা ভারতের আগমার্কা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাই এর নেপথ্যে।

 

 

(Image Representational)

Comments are closed.