ভোট শুরুর আগেই ১ মাসে কালো টাকা, মদ, মাদক মিলে দেশে বাজেয়াপ্ত প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি, এক নম্বরে গুজরাত

১০ ই মার্চ সন্ধ্যায় ভোটের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তারপর কেটেছে পাক্কা এক মাস। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এই এক মাসে (১০ ই মার্চ থেকে ৯ ই এপ্রিল পর্যন্ত ) গোটা দেশে কালো টাকা, মদ, মাদক, অলঙ্কার মিলে বাজেয়াপ্ত হয়েছে মোট ১৯০৮.৭৬ কোটি টাকার হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি। ভোট শুরু ১১ ই এপ্রিল, চলবে প্রায় এক মাস ১০ দিন। ভোট শুরু হলে বেআইনি টাকা, মদ, মাদকের ব্যবহার আরও কত বাড়বে, তা ভেবেই চিন্তায় দেশের নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে, ভোটারদের প্রভাবিত করতে নির্বাচনের আগে বিপুল কালো টাকা, মদ, মাদকের ব্যবহার চলে। তা রুখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভোট ঘোষণার পর থেকে ভোট শুরুর আগে পর্যন্তই এক মাসে বাজেয়াপ্ত হওয়া হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ দেখে চোখ কপালে উঠেছে কমিশনের কর্তাদের। কারণ, কমিশনের হিসেবে, যে কালো টাকার কারবার ভোটে আগে চলে, ধরা পড়ে তার কিছু শতাংশই মাত্র। ভোট পর্ব শুরু হলে এই কালো টাকার কারবার আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে কমিশন।
কমিশনের রিপোর্ট বলছে, গত এক মাসে সারা দেশ থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে মোট ১৯০৮.৭৬ কোটি টাকারও বেশি হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি। যার মধ্যে কালো টাকাই রয়েছে ৫২৮ কোটি। সবচেয়ে বেশি উদ্ধার হয়েছে মাদক দ্রব্য। সারা দেশে তল্লাশি চালিয়ে ৭২৫ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৪২৬ কোটি টাকা মূল্যের অলঙ্কার সামগ্রী।
কমিশনের তালিকা অনুযায়ী, হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাত। মোদীর রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ ৫১৩.৫৭ কোটি টাকা। গুজরাতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১১১ কেজি মাদক দ্রব্য বাজেয়াপ্ত করেছে প্রশাসন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫০০.০১ কোটি টাকা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মোদীর রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৩.১৪ লক্ষ লিটার মদ। যার বাজার মূল্য ৯.০৩ কোটি টাকা। অথচ গুজরাতে মদ নিষিদ্ধ।
গুজরাতের পরেই রয়েছে দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু। সেখানে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট হিসাব বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৪১২.০২ কোটি টাকা। নির্বাচন ঘোষণার পর এক মাসের মধ্যে সে রাজ্যে ধরা পড়েছে ১৭১.৩৪ কোটি কালো টাকা। ১ হাজার ২৯৫ কেজি গয়না, যার বাজারমূল্য ২৩০.৪ কোটি টাকা। তারপরেই রয়েছে আরেক দক্ষিণী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ। সেখানে বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পদের পরিমাণ ১৯৬.৩ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গে বাজেয়াপ্ত হওয়া হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ ৫২.২১ কোটি টাকা। তার মধ্যে রয়েছে ২০.৩৬ কোটি কালো টাকা এবং ১৭.১৮ কোটি টাকার গয়না।
ভোট ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলেও কমিশনকে এখন ভাবাচ্ছে অন্য একটি বিষয়। আর তা হল, কমিশনের নজর এড়িয়ে আরও কত টাকা ঘুরছে ভোটের ভারতে? রাত পোহালেই প্রথম দফার ভোট শুরু হয়ে যাবে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানেন, বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পদ হিম শৈলের চূড়া মাত্র। তাই স্বস্তিতে নেই নির্বাচন কমিশন।

Comments are closed.