বাবা ভাগচাষি, হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছেন এশিয়ানে রুপোজয়ী ভারোত্তলক বিথীকা মন্ডল

আঙরাইল খেদাপাড়া। বনগাঁর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এক অখ্যাত গ্রাম। গ্রামের সামনেই কাঁটাতার। গ্রাম থেকে বনগাঁ স্টেশন যেতেই সময় লাগে ২৫ মিনিট। প্রত্যন্ত এই গ্রাম থেকে উঠে এসেই পাওয়ারলিফটিংয়ে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন বিথীকা মন্ডল। বাংলার এই বছর ২৬ এর মহিলা ভারত্তোলক ২০১৭ সালে কেরালায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ক্লাসিক পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতেছেন। ভিসা সমস্যার জন্য কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিতে যেতে পারেননি।
তবে বিথীকা এখানেই থামতে রাজি নন। তাই তিনি রোজ ছুটে চলেন। তাঁর বাবা সামান্য ভাগচাষি। অন্যের জমিতে চাষ করে যেটুকু পান, কোনও মতো সংসার চালান। বিথীকা বলছিলেন, ‘পাওয়ারলিফটিংয়ে সাফল্য পেতে গেলে যে ডায়েট মেনে খাবার খেতে হয়, তার জন্য অনেক খরচ লাগে। অত তো আমাদের সামর্থ্য নেই। তাই বাড়িতে যা রান্না হয় তাই খেয়েই, অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

রোজ গ্রাম থেকে ২৫ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে সকাল সকাল বনগাঁ স্টেশনে চলে আসেন বিথীকা। সেখান থেকে সকাল সোয়া ৬ টা নাগাদ ট্রেন ধরেন। দমদম স্টেশনে নেমে মেট্রো ধরে চলে আসেন যতীন দাস পার্ক। কালীঘাটের কাছে সূর্য সংঘে রোজ অনুশীলন করেন বিথীকা। আবার এতটা পথ পেরিয়ে ফিরে যান বাড়িতে। হঠাৎ কেন পাওয়ারলিফটিংয়ে ভালোলাগা জন্মালো তাঁর? বিথীকা বলছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কবাডির প্রতি একটা অসম্ভব ভালোলাগা ছিল। স্কুলে থাকার সময় কবাডি অনুশীলনের জন্য ওজন তোলা শুরু করলাম। প্রথমে ওয়েট লিফটিং করতাম। সল্টলেকের সাইতে প্র্যাকটিস করতাম। তারপর আমার কোচ নীপেন্দ্রনারায়ণের পরামর্শে পাওয়ারলিফটিং শুরু করলাম। রাজ্যস্তরে এবং জাতীয় স্তরে অসংখ্য পদক জিতেছি।
বারবার রাজ্যের এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করেও অন্ধকার ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে বিথীকা। তাঁর একটা চাকরি যে ভীষণ প্রয়োজন। বিথীকা বলছেন, ‘চাকরির জন্য কোথায় না যাইনি। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্রীড়ামন্ত্রী সবার কাছে তদবির করেছি। এখন একটা চাকরি ভীষণ প্রয়োজন। নাহলে হয়তো পাওয়ারলিফটিংটা চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।’

Comments are closed.