বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযানে বাম ছাত্র-যুবদের উপর পুলিশি নির্যাতন। তারই প্রতিবাদে শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ১২ ঘন্টা বনধের ডাক দেয় বামফ্রন্ট। যার প্রভাব আংশিকভাবে পড়ল রাজ্যজুড়ে। কোনও জায়গায় জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হল দোকান, আবার কোথাও রাস্তা বন্ধ করে ধর্মঘটীদের ক্যারাম ও ফুটবল খেলতে দেখা যায়। স্বাভাবিক হাওড়া-শিয়ালদহ, সেক্টর ফাইভ, বারাকপুর শিল্পাঞ্চল।
সকাল থেকেই কলকাতার রাস্তায় সরকারি এবং বে-সরকারি বাস চলতে দেখা যায়। হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশনে ছিল ভিড়। কিন্তু অন্যান্যদিনের তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা ছিল কম। যাদবপুর সহ বিভিন্ন স্টেশন অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা। নেতৃত্বে বাম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী।
বনধকে সমর্থন করে পথে নেমেছিল কংগ্রেসও। বেলা বাড়তেই এন্টালি থেকে কলেজস্ট্রিট পর্যন্ত ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করে বাম-কংগ্রেস ছাত্র-যুবরা। মিছিল থেকে খোলা দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় গাড়িতে। যদিও বনধে অশান্তি এড়াতে সবরকম ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। শুধুমাত্র কলকাতাতেই ৩ হাজার পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। কোথাও কোথাও রাস্তা আটকে বনধ সমর্থনকারীদের ক্যারাম ও ফুটবল খেলতে দেখা যায়।
কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় বনধের মিশ্র সাড়া পাওয়া গিয়েছে। কোচবিহারে বাস আটকে দেন কংগ্রেস সমর্থকরা। কাঁথি-মেদিনীপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন ধর্মঘটীরা। আসানসোলে জোর করে অটো বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে।
[আরও পড়ুন- বনধ, করোনার জোড়া ফাঁস এড়িয়ে ১১ মাস পর খুলল স্কুল, মানতে হবে স্বাস্থ্য বিধি]
প্রায় ১১ মাস পর শুক্রবার স্কুল খুলেছে। বনধের দিন প্রথম স্কুল খোলায় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় পড়ুয়াদের। মালদায় স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেন বনধ সমর্থনকারীরা। প্রথম দিনেই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ছিল কম।
বামেদের পক্ষ থেকে রাজ্যে বনধ সফল হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বিমান বসু জানান, স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে মানুষ। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, লাঠি দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। বামপন্থীদের ছত্রভঙ্গ করা যাবে না। তিনি বনধ সমর্থন করে পথে নামায় কংগ্রেসকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
সকাল থেকেই যাদবপুরে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করা হয়েছিল। বনধের দিনও শান্তিপূর্ণভাবেই মিছিল করেছে সমর্থনকারীরা। বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে। অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দোকান বন্ধ করেছেন। এন্টালি মোড়ের কাছে গাড়ি ভাঙচুর করে বনধ সমর্থনকারীরা। মান্নান জানান, দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, নবান্ন অভিযানে পুলিস প্রশাসন যা করেছে তা এক কথায় বর্বরোচিত। অন্যদিকে বনধের দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল সমস্ত সরকারি কর্মীকে কাজে যোগ দিতেই হবে। অন্যথায় চাকরিজীবনে একদিন ছেদ পড়বে।
Comments are closed.