রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক সন্তান যোধারামের হার না মানা লড়াই শেষ পর্যন্ত এনে দিল ডাক্তারি পড়ার সুযোগ
ঋণভারে জর্জরিত কৃষক বাবা বলেছিলেন, হয় ৭০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। নয় পড়া ছেড়ে মুম্বইয়ে যেতে হবে শ্রমিকের কাজ করতে। বাবা জানতেন, ছেলের পড়ার খরচ টানতে পারবেন না বেশি দিন, কিন্তু কৃষিকাজে এসেও লাভ নেই কোনও।
বাড়ির অবস্থা পরিবর্তন করতে মরিয়া যোধারাম শেষ পর্যন্ত পাঁচ বারের চেষ্টায় এনইইটি পাশ করে সুযোগ পেলেন ডাক্তারি পড়ার। রাজস্থানের এক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যোধারামই প্রথম যুবক যিনি ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলেন মেডিকেল কলেজে।
খরাপ্রবণ এলাকা, এক খণ্ড চাষের জমিও দেনার দায়ে বন্ধক রাখা। এই অবস্থায় রাজস্থানের বারমের জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক নরিঙ্গারামজি প্যাটেল কোনওভাবেই চাননি তাঁর ছেলে কৃষিকাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিক। তাই ছেলে যোধারামকে শর্ত দিয়েছিলেন, হয় স্কুল বোর্ডের সব পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে, না হলে মুম্বইয়ে গিয়ে কোনও হোটেলের ডেলিভারি বয় বা কোনও কারখানায় শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে হবে। সেটা ২০১০ সাল। ছেলে যোধারাম বাবার প্রথম শর্তটাই পালন করতে শুরু করলেন কঠিন পরিশ্রম। রাতদিন পড়াশোনা করতেন যোধারাম। জীবনে কী হবে তা ঠিক না করলেও মুম্বইতে গিয়ে শ্রমিকের কাজ যে কিছুতেই করবেন তা নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন ছোট্ট যোধারাম।
এরপর ২০১২ সালে মাধ্যমিকে যখন ৬৫ শতাংশ নম্বর পেলেন, ভেবেছিলেন বাবা হয়তো ছাড় দেবেন এ যাত্রায়। মুম্বই যেতে হবে না তাঁকে। তবে বহু কষ্টে বাবাকে রাজি করিয়ে যোধপুর কে আর পাবলিক সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হন যোধারাম। আর ওবিসি হওয়ার জন্য স্কুল ফিও অনেকটা কম দিতে হত তাঁকে। যোধারামের পড়াশোনায় নিষ্ঠা দেখে স্কুলের প্রিন্সিপাল তাঁকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার জন্য উৎসাহিত করতেন। ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার প্রস্তুনি নিতে থাকেন যোধারাম। কিন্তু প্রথমবার এনইইটি যে র্যাঙ্কিং এল, তাতে কোনও সরকারি কলেজে সুযোগ পেতেন না যোধারাম। আর বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজে পড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। পরপর তিনবার প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করলেও র্যাঙ্ক ছিল বহু পেছনে। এদিকে বয়সও বাড়ছিল। বাবাও আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ছেলের ওপর থেকে। যোধারামের কথায়, সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জানলেও নির্ধারিত সময়ে সব শেষ করতে পারতেন না। তাই এমন র্যাঙ্ক হত। তবে চতুর্থবারে এনইইটি’তে যোধারামের র্যাঙ্ক হলো ১২ হাজার ৯০৩। কোটার এক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলেন যোধারাম। ফি অনেকটা কম হলেও খুশি হতে পারেননি যোধারাম। তাই ২২ বছরের তরুণ যোধারাম পঞ্চমবারের জন্য ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসলেন ফের। এবার ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে যোধারামের র্যাঙ্কিং হল ৩ হাজার ৮৮৬। যোধারামের আশা, এবার যোধপুরের সম্পূর্ণানন্দ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাবেন তিনি।
ছেলের সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা কৃষক বাবা জানাচ্ছেন, তিনি গর্বিত যে ছেলে তাঁকে ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছে। ছেলে মস্ত বড় ডাক্তার হবে এটাই এখন ইচ্ছে নরিঙ্গারামজি প্যাটেলের। আর এলাকার প্রথম ডাক্তারি পড়তে যাওয়া যোধারামের কথায়, ডাক্তারি পড়া সেরে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের সেবা করবেন তিনি।
Comments are closed.