এশিয়ার ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ভুগছে অপুষ্টিতে, মূল কারণ ভারতের বেকারি এবং পাকিস্তানের অর্থনীতি: রিপোর্ট রাষ্ট্রসংঘের
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮২ কোটি ১৬ লক্ষ মানুষ (১১ শতাংশ) বর্তমানে অপুষ্টিজনিত সমস্যার শিকার। যার মধ্যে শুধু এশিয়া মহাদেশের প্রায় ৫১ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় গত কয়েক বছরে খাদ্য সুরক্ষার হার ক্রমশ নিম্নমুখী হয়েছে, এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। এর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের কর্মসংস্থানের অভাব ও অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে দায়ী করা হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে।
সোমবার রাষ্ট্রসংঘের তরফে প্রকাশিত ‘স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন’ শীর্ষক রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে প্রচুর মানুষের দু’বেলা খাওয়ার জুটছে না। এমনকী কয়েকদিন অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল সংখ্যক মানুষকে। রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্ট আরও জানাচ্ছে, বিশ্বের প্রায় ৮২ কোটি মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশই এখন অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে এশিয়ার অপুষ্ট মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫১ কোটি। এরপরেই রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশ। সেখানে প্রায় ২৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই বলে প্রকাশ রাষ্ট্র সঙ্ঘের রিপোর্টে।
২০০৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত ভারতের অপুষ্টিজনিত সমস্যা ২৫ কোটি থেকে কমে ২০১৬-২০১৮ সালে ১৯ কোটিতে দাঁড়ালেও, তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে না রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য ভারতের কর্মসংস্থানের অভাবকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায়।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে প্রকাশ, বিশ্বজুড়ে ক্রমশ প্রকট হচ্ছে অপুষ্টিজনিত সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির অর্থনৈতিক সমস্যা, জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশভিত্তিক কিছু সমস্যার কারণে এই দুই মহাদেশে খাদ্য সুরক্ষার অভাব ঘটছে। এই কারণেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে অপুষ্টির সমস্যা কমছিল, কিন্তু গত ২ বছরে তা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। রিপোর্ট বলছে, ২০১৪ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় অপুষ্টিজনিত সমস্যা অনেকটাই কমছিল। ২০১৪ সালে ১৩.৭ শতাংশ থেকে ২০১৬ সালে খাদ্য নিরাপত্তাজনিত সমস্যা কমে দাঁড়ায় ১০.৬ শতাংশে। কিন্তু ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালে খাদ্য অনিরাপত্তাজনিত হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৪.৪ শতাংশে। যা ২০১৪ সালের পর থেকে সর্বাধিক বলে জানাচ্ছে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান ডেভিড বিসলের কথায়, খাদ্য সুরক্ষা না থাকলে কোনও দেশে সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে যে হারে অপুষ্টিজনিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে যে ‘জিরো হাঙ্গার’এর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তা সম্ভবপর হবে না বলে জানান ডেভিড বিসলে। আর রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট বলছে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রত্যেকটি দেশের আশু কর্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার রক্ষা করা, সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া এবং সঠিক বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করা।
Comments are closed.