নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পেরোতে হবে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব। হাতে সময় মাত্র একদিন। এনআরসির রি-ভেরিফিকেশনের জন্য প্রশাসনিক তলবে চরম সমস্যায় অসমের কামরুপ জেলার বোকো অঞ্চলের প্রায় ৩ হাজার মানুষ।
গত শনিবার প্রশাসনের এমন জরুরি তলবে মাথায় আকাশ ভাঙে ১০২ বছরের মহম্মদ আনোয়ার আলির। অসমের বোকো অঞ্চলের প্রবীণতম মানুষটিও রি-ভেরিফিকেশনের নোটিস পেয়েছেন। তাঁকে যেতে বলা হয়েছে, অসমের জোড়াহাটের শিবসাগরে। একেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তার উপর এমন এক জায়গায় তাঁকে যেতে বলা হয়েছে, যা ঠিকমতো চেনেন না মহম্মদ আনোয়ার আলি। সংবাদমাধ্যমকে বৃদ্ধ আনোয়ার আলি জানান, জন্ম থেকেই তিনি বরুগাঁওয়ে আছেন। পরিবার সহ তাঁকে যেখানে তলব করা হয়েছে, সেই জায়গার আগে নামই শোনেননি। তারপর, একসঙ্গে পরিবারের ১৬ জন মানুষের যাতায়াতের টাকা কোথায় পাবেন তা নিয়েও গভীর চিন্তায় মহম্মদ আনোয়ার আলি। তাঁর মতোই বিপদের মধ্যে পড়েছেন অসমের আরও অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
এনআরসি রি-ভেরিফিকেশনের জন্য গত শনিবার নোটিস পেয়েছিলেন অসমের কামরুপ জেলার হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সমস্যা হল প্রায় সবাইকেই বাড়ি থেকে গড়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে ভিন জেলার প্রশাসনিক ভবনে তলব করা হয়েছে। তড়িঘড়ি নিজেদের যা সম্বল ছিল, তা নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন। অভিযোগ, এই তাড়াহুড়োতেই রবিবার গুয়াহাটির খানাপাড়ার কাছে একটি বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আহত হন ২৪ জন ।
কীভাবে এত কম সময়ের মধ্যে ভিন জেলার প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছবেন সেই প্রশ্ন করেছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু ৩১ শে অগস্টের মধ্যে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তৈরিতে প্রবল ব্যস্ত প্রশাসনিক কর্তারা। তার ওপর অসমের মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোওয়ারি সম্প্রতি বিধানসভায় দাবি করেছেন, এনআরসির খসড়ায় এখনও প্রচুর ভুল নাম রয়ে গিয়েছে অন্যদিকে বাদও পড়েছে সত্যিকারের বাসিন্দাদের নাম। অথচ এই সময়ে তাড়াহুড়ো করা ছাড়া আর কোনও পথ নেই বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে খসড়া তৈরি করলেও কি ভুলের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে না? উত্তর নেই প্রশাসনিক কর্তাদের কাছেও। আর এই দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে ১০২ বছরের মহম্মদ আনোয়ার আলির অবস্থা ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচির মতো।
Comments are closed.