জেএনইউ-তে পড়ুয়াদের ফি বৃদ্ধির বিরোধী আন্দোলনের এক মাস কেটে গেল। এখনও তা মেটার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেখানকার ছাত্র সংসদ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, বর্ধিত ফি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ বলেন, এত দিন ধরে ক্লাস বন্ধ। সব অচল। আমরা চাই, দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক। কিন্তু ছাত্রদের সঙ্গে উপাচার্য তো বসতেই চাইছেন না।
বুধবার সারা দেশেই জেএনইউ-র পড়ুয়াদের দাবির সমর্থনে এবং সকলের জন্য শিক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ আন্দোলন হয়। কলকাতায় জেএনইউ-র প্রাক্তনীরা মিছিল করেন। দিল্লি শহরের সেন্ট্রাল পার্কে মিছিলে হাঁটেন জেএনইউ-র পড়ুয়ারা। সেই মিছিলে সামিল হন অন্য আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা। এমনকী সেই মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে বহু সাধারণ মানুষকেও। জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি সাকেত মুন জানান, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশ। প্রায় দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ চিঠি দিয়ে তাঁদের লড়াইয়ে পাশে থাকার কথা জানিয়েছে।
প্রশ্ন হল, জেএনইউ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এত ক্ষোভ কেন? এক মাস ধরে জেএনইউ-এর মতো নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম অচলাবস্থা চলতে দেওয়া হচ্ছে কেন? কেনই বা কেন্দ্রীয় সরকার হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে? প্রশ্ন আরও রয়েছে। জেএনইউ-র পড়ুয়ারা আন্দোলন করলেই কেন তাঁদের দিকে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়?
আসলে জেএনইউকে ভয় পায় সরকার। কারণ, জেএনইউ মুক্ত উদারবাদের কথা বলে, মুক্ত চিন্তা করতে শেখায়। সেখানকার পড়ুয়ারা যে কোনও সামাজিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁরা অন্ধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। দলিতদের পাশে দাঁড়ান। মেয়েদের ছোট করে দেখানোর প্রতিবাদ করেন। সমকামীতার পক্ষ নেন। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাই কেন্দ্রের সরকার জেএনইউ-র অন্দরে শহুরে নকশাল খুঁজে বেড়ায়। সনাতনপন্থী বিজেপি বহু চেষ্টা করেও জেএনইউ দখল করতে পারেনি। বিজেপির সর্বগ্রাসী ক্ষুধা জেএনইউ-র দোরগোড়ায় এসে থমকে গিয়েছে। তাই জেএনইউ-এর প্রতি এত বিতৃষ্ণা। সঙ্ঘ পরিবারের অনুগামী উপাচার্যকে বসিয়েও বাগে আনা যাচ্ছে না ‘বেয়াড়া’ পড়ুয়াদের। তাই যে ভাবেই হোক, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবিয়ে রাখতে হবে। বিজেপি মনে করছে, একদিন না একদিন পড়ুয়ারা আন্দোলন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা হয়তো ভুলে গিয়েছেন, জেএনইউ-এর পড়ূয়ারা অন্য ধাতুতে গড়া। যতই ওঁদের উপর দমন পীড়ন হবে, ততই ওঁরা ফুঁসবেন। ওদের বাঁধন যত শক্ত হবে, ততই বাঁধন টুটবে। জেএনইউ-এর একটা অন্য পরিসর আছে, সেটা কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা ভুলে যান। অতীতেও জেএনইউ-এর পড়ুয়ারা কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।
কোনও কোনও মহল এই ফি বৃদ্ধির আন্দোলনকে বাড়াবাড়ি বলছেন। নেট দুনিয়ায় প্রচার চলছে, জনগণের করের টাকায় পড়ুয়ারা ফুর্তি করবে কেন? আবার তার পাল্টা প্রচারও আছে। এই প্রচার, পাল্টা প্রচারের মধ্যেই পড়ুয়ারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সংবিধান স্পষ্ট বলেছে, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা দেশের সরকারকেই করতে হবে। সেখানে কোনও বৈষম্য চলবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা দফায় দফায় ফি-এর হার কমাচ্ছে। কিন্তু তাতে মন গলছে না পড়ুয়াদের। তাঁরা চান, বর্ধিত ফি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক। এত জল কামান, লাঠি দিয়েও বাগে আনা যায়নি জেএইউ-র ছাত্র-ছাত্রীদের। বাগে আনা যাবেও না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এখন উচিত, ইগো না দেখিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা। এর আগে জেএনইউ-তে কেন্দ্রীয় সরকার কানহাইয়া কুমারদের আন্দোলনকেও কব্জা করতে পারেনি।
Comments are closed.