লাল মাটির দেশ বাঁকুড়া। টেরাকোটার অনবদ্য ভাস্কর্য, বালুচরি শাড়ির মতই এই জেলার বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশ আজ খবরের শিরোনামে। ‘মেচা সন্দেশের’ জন্য জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশনের (জি আই)দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কারিগররা। চলতি বছরের মার্চ মাসে জি আই পেটেন্টের জন্য আবেদন জানান বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশের কারিগররা। বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশ প্রস্তুতকারক হরিদাস দে জানালেন, বেলিয়াতোড়ে এখনও ১০ থেকে ১৫ জন কারিগর এই মিষ্টি তৈরি করেন। রসগোল্লার থেকে তাঁদের এই মেচা সন্দেশের ইতিহাস কিছু কম প্রাচীন নয়।
দুর্গাপুর- বাঁকুড়ার পথে ন’নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এক ছোট্ট জনপদ বেলিয়াতোড়। এই বেলিয়াতোড়েই জন্মেছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায় এবং শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন পুঁথি আবিষ্কারক তথা ভাষাতাত্বিক বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদবল্লভ। যামিনী রায়ের পৌত্র সৌমকান্তি রায় thebengalstory.com কে জানালেন, তাঁর দাদু যামিনী রায়ের প্রিয় মিষ্টির মধ্যে ছিল এই ‘মেচা সন্দেশ’। জানা গেল, বিষ্ণুপুর রাজার দেওয়ান ছিলেন এই রায় বংশের পূর্বপুরুষেরা। সেই সময় বিষ্ণুপুরে মল্ল রাজারা ছিলেন শাসন ক্ষমতায়। রায়বংশের পূর্বপুরুষরা বেলিয়াতোড়ের জমিদারি উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন। তবে তখন বেলিয়াতোড়ের নাম ছিল বেলিয়াতোটক। মল্ল রাজারা ছিলেন খাদ্য রসিক। তবে রুখা-শুখা এই জেলায় সেইভাবে ছানা থেকে তৈরি মিষ্টির প্রচলন ছিল না। তাই বিকল্প হিসাবে ছোলার বেসন দিয়ে বানিয়ে ফেলা হয় এই সুস্বাদু ‘মেচা সন্দেশ’। ছোলার ডালের বেসনকে শক্ত করে মাখা হয় , এরপর ওই শক্ত মণ্ডটি সাঞ্চার সাহায্যে বিশেষ পদ্ধতিতে চাপ দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। শক্ত মন্ডটি ঢেঁকিতে গুড়ো করা হয়। এরপর কারিগররা ক্ষোয়া ক্ষীরের সঙ্গে এবং বেসনের মণ্ডটি মিশিয়ে নাড়ুর আকারে গড়ে নিয়ে চিনির রসে পাক করেন। তবে খুব বেশি সময় চিনির রসে ফোটানো হয় না। ওই নাড়ু বা লাডডুর আকারে গড়ে তোলা মিষ্টান্নটিই হল মেচা সন্দেশ, এর ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় পুরু চিনির আস্তরণ। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা পর্যন্ত সাইজ অনুসারে দাম এই সন্দেশের।
বাংলা এবং ওড়িশার রসগোল্লার পেন্টেটের লড়াই গড়িয়েছিল জি আই-এর দফতরে। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই মিষ্টি লড়াইতে অবশ্য শেষ হাসি হেসেছে বাংলাই। রসগোল্লার পর এবার পেটেন্টের লড়াইতে শামিল বেলিয়াতোড়ের ‘মেচা সন্দেশ’। মেচা সন্দেশের কারিগরদের কথায়, তাঁদের বেলিয়াতোড় প্রথম পথ দেখিয়েছিল কীভাবে ছানার ব্যবহার না করেও মিষ্টান্ন প্রস্তুত করা যায়। অথচ বর্তমানে বহুজাতিক ঝাঁ-চকচকে হরেক মিষ্টির দোকানের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁদের সৃষ্টি ‘মেচা সন্দেশ’। তাই অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আজ বেলিয়াতোড়ের ‘মেচা সন্দেশের’ কারিগররা চাইছেন জি আই স্বীকৃতি