ইটভাটায় থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট। রোদে শুকানোর পর এই ইটগুলো দেওয়া হবে চুল্লিতে। বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁদের শিশু সন্তানরাও ব্যস্ত ইটভাটার কাজে। হুগলি, হাওড়া, উত্তর বা দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেসহ সব জেলাতে এটাই চেনা ছবি। সাধারণত ভিন রাজ্য থেকে ইটভাটাগুলিতে কাজ করতে আসেন হাজার-হাজার পুরুষ-মহিলা। টানা ছ-সাত মাস তাঁরা রাজ্যের ইটভাটাগুলোতে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই বাড়িতে শিশু সন্তানদের দেখাশোনার মত কেউ না থাকায় তাদেরও নিয়ে আসা হয় ইটভাটাগুলিতে।
শিশু শ্রমিকের চাহিদা বিভিন্ন ইটভাটাগুলিতে সব সময় বেশি। এমনকী মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে এই সব শিশু-কিশোর কাজ করছে, এই দৃশ্যও বিরল নয়। তবে খুব সম্প্রতি এই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মিনাখাঁ ব্লকের ১০ টি ইটভাটাতে শিশু শ্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কমিউনিকেশন এন্ড সার্ভিসেস সেন্টার (ডিআরসিএসসি) ইটভাটার মালিকদের নিয়ে এই সচেতনতা অভিযানে নেমেছে। প্রথাগত স্কুলে পাঠানোর আগে ইটভাটাতেই ওই শিশু-কিশোরদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিনাখাঁ ব্লকের চৈতল গ্রাম পঞ্চায়েতের ইউনাইটেড ব্রিকলিন ইটভাটার মালিক আবদুল হামিদ এই বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। ইটভাটাতে কর্মরত শিশুদের জন্য পঞ্চায়েতের উদ্যোগে শুরু হয়েছে আইসিডিএস শিক্ষাকেন্দ্র। যেখানে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি শিক্ষাও পাচ্ছে শিশুরা।
আবদুল হামিদ জানালেন, তাঁর ইটভাটা যেমন শিশু শ্রম মুক্ত করা হয়েছে, আশেপাশের অন্য ইটভাটাতেও সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে পাঠানোর পাশাপাশি তাদের বাবা-মাকেও সচেতন করা হচ্ছে, যাতে তাঁরাও বুঝতে পারেন সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। ৯ জুন পালন করা হয় শিশু অধিকার দিবস। শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে তাই তাদেরও শ্রমজীবীর তালিকায় নাম উঠে যায়। নিজের ইটভাটায় শিশুদের পড়ানোর ব্যবস্থা করে পথ দেখাচ্ছেন মিনাখাঁর আবদুল হামিদের মতো মানুষেরা।