ভালো Telebhaja কোথায় পাই, বলতে পারেন ?
এই বিশেষ খাবারটির প্রতি বাঙালির দুর্বলতা বহু পুরনো। রামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ, নেতাজির মতো মনীষীদেরও বড্ড প্রিয় খাবার ছিল “telebhaja”। সময় গড়িয়েছে। বাঙালির টিফিন তালিকায় বহুদিন আগেই ঢুকে পড়েছে পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচের মতো বিদেশি খাবার। কিন্তু তেলেভাজার কদর আজও কমেনি। বাঙালির আড্ডা থেকে অতিথি আপ্যায়নে তেলেভাজার ভূমিকা এখনও একইরকম রয়ে গিয়েছে। আপনিও যদি সেই তেলেভাজা-প্রিয় বাঙালি হন, তা হলে আপনার জন্য থাকল কলকাতার বুকে কিছু বিখ্যাত দোকানের সুলুক-সন্ধান।
লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স
দিনটা ২৩ জানুয়ারি। সেদিন সকাল থেকেই ১৫৮ বিধান সরণি ঠিকানার বিখ্যাত তেলেভাজার দোকান লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্সে লাইন পড়ে যাবে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বহু বছর ধরেই এখানে বিনামূল্যে চপ বিলি হয়। ১০০ বছরের পুরনো এই তেলেভাজার দোকান তেলেভাজা-রসিক বাঙালির অন্যতম ঠিকানা।
১৯১৮ সালে একটি ছোট্ট ঝুপড়ির আকারে এই তেলেভাজার দোকান তৈরি করেছিলেন বর্তমান দোকানের মালিকের দাদু কেদু সাউ। প্রায়ই নাকি নেতাজির কাছ থেকে চপ-মুড়ি পাঠানোর অর্ডার পেতেন তিনি। স্বদেশি আমলে সভা-সমিতি করতে গিয়ে বহু সময় সুভাষচন্দ্র এই দোকানের তেলেভাজা খেয়েছিলেন। আপাদমস্তক নেতাজিভক্ত কেদু সাউয়ের নির্দেশ ছিল, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে কেউ তেলেভাজা খেতে এলে তাঁর কাছ থেকে পয়সা নেওয়া যাবে না। সেই থেকে আজও নেতাজির জন্মদিনে উত্তর কলকাতার এই তেলেভাজার দোকানে ছোটদের জন্য দুটো করে এবং পরিবার প্রতি চারটে তেলেভাজা বরাদ্দ থাকে বিনামূল্যে।
বেথুন, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিকেলে বেরিয়ে শ্যামবাজারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে হোক, স্টার থিয়েটারে সিনেমা বা নাটক দেখে বেরনো, কিংবা হাতিবাগানে নিছক শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে এসে লক্ষ্মীনারায়ণ সাউয়ের দোকানের তেলেভাজা চেখে দেখা অনেকেরই প্রায় রোজকার রুটিন। আলুর চপ, পেঁয়াজি, নারকেলের চপ, আমের চপ, ফুলুরি, বেগুনি, ফুলকপি, মোচা, পনির, ভেজিটেবল, ক্যাপসিকামের মতো হরেক রকমের চপ তৈরি হয় এই দোকানে। পাশাপাশি, লক্ষ্মীনারায়ণের বড় প্যাকেটে চানাচুর, ঝুরিভাজা, চিঁড়েভাজারও নির্দিষ্ট ক্রেতা আছে।
বিকেলে চপ-মুড়ি-চায়ের সঙ্গে পুরনো কলকাতায় আড্ডাপ্রিয় বাঙালির অন্যতম টান হল ১৫৮ বিধান সরণির লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স।
কালিকা
কলেজ স্ট্রিটে বই কিনে কলেজ স্কোয়ারে আড্ডা জমিয়ে হোক কিংবা বাড়িমুখী অফিসফেরত বাবুরা থেমে যান ২৯ সূর্য সেন স্ট্রিটের আর এক প্রাচীন তেলেভাজা দোকানের সামনে, নাম ‘কালিকা’। বছর পঞ্চাশ আগে এক কালীপুজোর দিনে এই দোকানের উদ্বোধন হয়েছিল, সেখান থেকেই নাম কালিকা। মোটামুটি দুপুর থেকেই খুলে যায় এই দোকানটি। কালিকার বিখ্যাত পদ হল চিংড়ি, ভেটকির চপ ও ডিমের ডিভেল। তাছাড়া পেঁয়াজি, মোচার চপ, বেগুনি, আলুর চপ তো আছেই। বহু বছরের পুরনো এবং ছোট্ট এই দোকানটি আজও তেলেভাজা প্রিয় বাঙালির অন্যতম পছন্দের ঠিকানা।
পটলার চপ
শ্যামবাজার থেকে বাগবাজার স্ট্রিট ধরে গঙ্গার ঘাটের দিকে হাঁটলে চোখে পড়ে যাবে বহু প্রাচীন এই চপের দোকান। দোকানের বয়স একশো পেরিয়ে গেলেও আজও ‘পটলার চপ’ এর জনপ্রিয়তা সমান অটুট। তিন প্রজন্মের এই তেলেভাজার দোকানের প্রতিষ্ঠাতার নাম শশীভূষণ সেন। সকালে আলুর তরকারি সহযোগে কচুরি, বেগুনি আর আলুর চপ মেলে। বিকেল হলে আবার পটল, মোচা, আলু, ক্যাপসিকাম, ভেজিটেবল চপ থেকে রাধাবল্লভী খাওয়ার বিশাল লাইন পড়ে যায় এই দোকানে।
মুখরুচি
পুরনো কলকাতার আর একটি প্রাচীন তেলেভাজার দোকান বরানগরের গোপাল লাল ঠাকুর রোডে অবস্থিত ‘মুখরুচি’। শোনা যায়, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই দোকানের নিয়মিত খরিদ্দার ছিলেন। ফগুলাল সাউর হাতে ভাজা গরম গরম আলুর চপ, বেগুনি নাকি তাঁর বিশেষ পছন্দের ছিল। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে থাকার সময় প্রায়ই ‘মুখরুচি’র তেলেভাজা খেতেন রামকৃষ্ণ। তখনকার বিখ্যাত নট ও নাট্যকার গিরিশ ঘোষও এই দোকানের তেলেভাজা খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন। সেই থেকে বিখ্যাত হয়ে যায় এই তেলেভাজার দোকানটি। এখনও সকাল, সন্ধ্যের আড্ডায় রসেবশে বাঙালির রসনা তৃপ্তি করে আসছে মুখরুচি।
এই পুরনো দোকানগুলি ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু বিখ্যাত telebhaja দোকান। বার্গার, পিৎজার বাজারেও শুধুমাত্র স্বাদ আর কোয়ালিটির জন্য খাদ্যরসিক বাঙালির মনজুড়ে রয়েছে এই telebhaja দোকানগুলি।
Comments are closed.