মঙ্গলবার সাত সকালে নর্থ ব্লক থেকে তলব গিয়েছিল শ্রীনগরে। পত্রপাঠ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল তাঁকে। বেলা গড়াতে হয়ে যায় সরকারি ঘোষণা, দাঙ্গা বিধ্বস্ত দিল্লিতে পুলিশের মান ফেরাতে কাশ্মীর থেকে ডেকে আনা হয়েছে এস এন শ্রীবাস্তবকে। দেওয়া হয় বিশেষ পুলিশ কমিশনার (আইন শৃঙ্খলা) পদ। মূল কাজ দিল্লিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো।
তারপর তিনদিন কেটে গিয়েছে। দিল্লিতে হিংসার বাড়বাড়ন্ত আটকানো গিয়েছে বলে দাবি করছে প্রশাসন। এবার কাজ স্বাভাবিকতা ফেরানো। এরই মধ্যে শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, দিল্লির পরবর্তী সিপি হচ্ছেন কাশ্মীর ফেরত এস এন শ্রীবাস্তব। কাশ্মীরে সিআরপিএফের স্পেশাল ডিজি পদ ছেড়ে তিনি দিল্লি পুলিশে ফিরলেন।
কিন্তু কে এই এস এন শ্রীবাস্তব, যাঁর হাতে গেল হাজারো সমালোচনায় বিদ্ধ, আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকা দিল্লি পুলিশের ভার?
১৯৮৫ ব্যাচের AGMUT ক্যাডার সচ্চিদানন্দ শ্রীবাস্তব আইআইটি খড়গপুর থেকে বি-টেক পাশ করেছেন। কলেজ জীবনে মিডিয়াম পেস বোলিং করে নাম কুড়োনো এস এন শ্রীবাস্তব এরপর ইউপিএসসি দিয়ে আইপিএস হন। কাজের চাপে খেলা ছাড়লেও, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা কমেনি। আইপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডের পর্দাফাঁস করে তা হাতেকলমে প্রমাণ করেছিলেন সেই সময় দিল্লি পুলিশের সম্ভ্রম জাগানো স্পেশাল সেলের প্রধান শ্রীবাস্তব।
তাঁর সম্পর্কে জনশ্রুতি, প্রবল চাপের মুখে দাঁড়িয়ে পরপর সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিম শীতল মাথার আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তনী এই আইপিএস অফিসারের জুড়ি নেই। রসিকতা করে অনেকেই বলছেন, দিল্লি আইআইটির কপাল পোড়া, রাজধানীতে কেবল আইআইটি খড়গপুর, একদিকে মুখ্যমন্ত্রী, অন্যদিকে পুলিশ কমিশনার।
কাশ্মীরে সিআরপিএফে থাকার সময় গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে রোজ। এবার সেই অভিজ্ঞতা এস এন শ্রীবাস্তব কাজে লাগাবেন দাঙ্গা বিধ্বস্ত দিল্লির ক্ষত মেরামত করতে। এই কাজে সফল হবেন কি এস এন শ্রীবাস্তব? তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের একাংশের দাবি, ক্রাইসিস সামাল দিতে শ্রীবাস্তবের বিকল্প নেই। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কীভাবে ছক কষে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে নিশ্চিহ্ন করেছিলেন এই অসম সাহসী আইপিএস অফিসার। মাওবাদী এলাকায়ও কাজের অভিজ্ঞতা আছে। সিনিয়রিটি কিংবা অভিজ্ঞতা, সব দিক থেকেই এস এন শ্রীবাস্তব বাকিদের চেয়ে বহু যোজন এগিয়ে।
সম্মান যেমন আছে, অসম্মানের কালচে ছোপও আছে। তিনি তখন দিল্লি পুলিশের প্রেস্টিজিয়াস স্পেশাল সেলের হেড। স্পেশাল সেল লিয়াকৎ শাহ নামে এক ব্যক্তিকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করে। পরে, ২০১৩ সালে এনআইএ অভিযোগ করে, স্পেশাল সেল লিয়াকতকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছিল। এরপর এস এন শ্রীবাস্তবকে স্পেশাল সেলের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এবার নতুন দায়িত্ব। দিল্লিকে শান্ত করার ভার যেমন সচ্চিদানন্দ শ্রীবাস্তবের কাঁধে, ঠিক তেমনই বাহিনীর প্রতি আম দিল্লিবাসীর ভরসা ফেরানো তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ক্রিকেটের জ্ঞান থেকে জানেন, রাতারাতি কিছুই হবে না। ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে রান আসবে। দিল্লি ফিরবে দিল্লিতে।
Comments are closed.