Lockdown: সতর্কতা নিতেই হবে, মায়ের জন্য খাবার নিয়ে গিয়ে টিফিন বাক্স ঘরের বাইরে রেখে আসছি, ভেতরে ঢুকছি না
করোনা আতঙ্কে এখন প্রায় গোটা বিশ্বই লকডাউনে চলে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এটাই সব থেকে বেশি দরকার। আগামী ১৪ দিনের এই লকডাউনই বলে দেবে, ভারতবর্ষ এই মারণ ভাইরাসের ছড়ানোকে আটকাতে কতটা সক্ষম। এখন এই লকডাউনের পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতেই হবে।
আমি বেশ কিছু সিনেমা দেখে ফেললাম এর মধ্যে। তাঁর মধ্যে রয়েছে বলিউডের বেশ কিছু সিনেমা। যেমন পুরনো দিনের কিছু জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে, তেমনই রয়েছে হালের কিছু অ্যাকশন ফিল্ম। এই মুহূর্তে আমাদের সব থেকে বড় কাজ, বাড়িতে নিজেদের সুরক্ষিত করে রাখা। এছাড়াও খবরের দিকে নজর তো রয়েছেই। খবরের চ্যানেল ঘুরিয়েই কার্যত কেটে যাচ্ছে গোটা দিন। এই লকডাউনের জেরে প্রথমে কিছুটা সমস্যা হলেও, এখন গোটা পরিস্থিতি কিছুটা ভালোর দিকেই এগোচ্ছে বলা যেতে পারে।
এছাড়াও এখন একটা বড় দায়িত্ব আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নেওয়া। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। আমি সম্প্রতি বিএসএনএল থেকে অবসর নিয়েছি। এখন পাবলিক রিলেশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কলকাতা চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত। এই মুহূর্তে কমিউনিকেটর হিসেবে আমাদের কী কী করনীয় ও এই পরিস্থিতিতে স্ট্রাটেজি কী হতে পারে, তা নিয়ে অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমেই কথাবার্তা চালু রেখেছি।
এছাড়া বাড়িতে এখন বিভিন্ন রকমের গৃহস্থলির কাজে সাহায্য করাও চলছে পুরোদমে। যে কাজগুলি এর আগে কোনদিনও করিনি। আমি নিউটাউনে থাকি। এখানে এমন কিছু গ্রুপ রয়েছে যাঁরা এই দুর্দিনে সাধারণ দিন আনি-দিন খাই মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। আমারও ইচ্ছে তাঁদের সঙ্গে থেকে এই দুঃস্থ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর।
তবে এই কয়েকদিনে বেশ কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। আমার মায়ের ওষুধ কিনতে গিয়ে দেখলাম, মানুষ প্রচণ্ড ভীত ও সন্ত্রস্ত এই লকডাউন নিয়ে। কিছু মানুষ প্রায় ছ’মাসের ওষুধও একবারে কিনছেন! তাই প্রথম দিকে মায়ের ওষুধ কিনতে একটু সমস্যার সম্মুখীন হলেও, পরে সেই সমস্যা অতটা হয়নি।
আমার মা সল্টলেকে থাকেন। তাঁর ৮৪ বছর বয়স। আর এই বয়সের মানুষকে খুবই সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরাও তাই যতটা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করছি। এমনকী তাঁদের জন্য খাবার নিয়ে গেলেও টিফিন বাক্সটা দরজার বাইরে রেখে দিচ্ছি। বাড়ির ভেতরে ঢুকছি না। দেখাও করছি না। এই রকমভাবেই চলছে আপাতত। দুই-তিনটি জায়গা ঘুরে ওষুধ-পত্র খুঁজে নিয়ে এসেছি। তাও একটা ওষুধ পাওয়া যায়নি।
নিউটাউনে সকালের দিকে বাজার-দোকানে একটু বেশিই ভিড় হচ্ছে জিনিসপত্র কেনার জন্য। বিকেলের দিকে দোকানে জিনিসপত্র বা সবজি থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলি পড়েই রয়েছে। আমাদের এখানে স্পেনসার্স বা মোর-এর মত যে সমস্ত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর রয়েছে, সেখানে বিলাসিতার জিনিস না পাওয়া গেলেও এখন নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। মাছ-মাংস খাওয়াটা একটু কমিয়ে দেওয়াতে সেটা নিয়েও খুব যে সমসস্যায় পড়তে হচ্ছে, এমনটা নয়।
আমি ডায়াবেটিক পেশেন্ট। কাজেই আমাকে খাওয়া-দাওয়াটা খুবই নিয়ন্ত্রণে রেখেই করতে হয়। ক্যালোরি মেপেই খাই বরাবর। সেটাই মেনে চলছি। ফল বা ফলের রস খাচ্ছি। মুলত শাক-সবজির উপরই বেশি জোর দিচ্ছি এখন।
লকডাউনের কথা যখন প্রথম ঘোষণা হল, তখনই প্রস্তুতি হিসেবে কিছু জিনিস কিনেছিলাম। সেগুলি দিয়েই এখনও চলে যাচ্ছে। তবে আশ্চর্য হয়েছি, মানুষ এত খাবার কিনে নিয়ে মজুত করছেন এটা দেখে। কারণ সেই সব খাবার তো দু’দিন পরেই নষ্ট হয়ে যাবে। তখন তো সেটা আর কোনও কাজেই লাগবে না। আমি সরকারের নির্দেশ মানছি। জিনিসপত্র মজুত করছি না। যতটুকু দরকার ততটুকুই কিনছি। কিন্তু খারাপ লাগছে এটা দেখে যে অনেক মানুষ এই নির্দেশ মানছেন না।
তবে পরিবারের সবার সঙ্গে অনেক দিন পর খুব ভালো একটা সময় কাটাচ্ছি। সবাই বাড়িতে রয়েছে, আমার বড় ছেলেও কিছুদিন হল বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ সামলাচ্ছে। আর এই সবের মধ্যে যেটা হয়েছে তা হল, ঘুম বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতেও একটু দেরি হচ্ছে। নেটফ্লিক্স, হটস্টার সিনেমার ভাণ্ডার শেষ করে ওয়েব সিরিজে হাত দেব ভাবছি। এছাড়াও বই রয়েছে কিছু যা পড়ব বলে নামিয়ে রেখেছি। এখনও তো ১৪ দিন এভাবেই চালাতে হবে। পরিবারের সঙ্গে বসে পুরনো ছবিও দেখছি। তাতে অনেকটা সময় কাটছে, আর পুরনো স্মৃতিগুলোও একবার নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে।
খবরের কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না আমাদের কমপ্লেক্সে। তাই এখন খবর পড়ার জন্য প্রধান ভরসা হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যম। এর জন্যই এখনও সেভাবে খবরের কাগজের অনুপস্থিতিটা বিশেষ টের পাইনি বলতে পারেন। আমাদের কমপ্লেক্সে এখন বাইরের লোকজন ঢোকা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে আগামী কয়েকটা দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই করোনা ভাইরাসের ফলে দেশে যে লকডাউন আর তার জেরে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তার আঁচ যে সাধারণ মানুষের উপর এসে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগামী দিনে যে মন্দা আসতে চলেছে তা বলা যেতেই পারে। তবে এই করোনা যুদ্ধে যদি ভারতবর্ষ জিততে পারে, তাহলে পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলোর কাছে এই মর্মে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে, নানা জাতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক পার্থক্যের মধ্যেও দুঃসময়ে আমরা সবাই এক হয়ে লড়ার ক্ষমতা রাখি।
(অনুলিখন: অভিজিৎ দাস )
Comments are closed.