করোনা: মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৫ এপ্রিলে দেশে বেকারত্ব পৌঁছল ২৩.৪ % তে, বড় কোপ অসংগঠিত ক্ষেত্রে, CMIE এর রিপোর্টে কপালে চিন্তার ভাঁজ
করোভাইরাসের হানায় ত্রস্ত দুনিয়া, বেসামাল অর্থনীতি। বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মন্দা ও বিপুল মানুষের কর্মহীন হওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে ভারতে কর্মসংস্থানের তথ্য যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে বেকারত্বের হারের আকাশ ছোঁয়ার উপক্রম। রিপোর্ট বলছে, ইতিমধ্যেই দেশে বেকারত্বের হার গিয়ে ঠেকেছে ২৩.৪ শতাংশে। শহর এলাকায় বেকারত্বের হার ৩০.৯ শতাংশ। এমনই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান দিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (CMIE) সাপ্তাহিক রিপোর্ট।
জানেন, করোনা থাবায় বিশ্বজুড়ে আড়াই কোটি মানুষ কাজ হারাতে পারেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ?
৫ এপ্রিল পর্যন্ত নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার একটি রিপোর্ট পেশ করেছে CMIE। যেখানে বলা হয়েছে, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে বেকারত্বের হার ৮.৪ শতাংশ থেকে বাড়তে বাড়তে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তা ২৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন একটি প্রাথমিক গণনা করে জানাচ্ছেন, দেশে ২৪ মার্চ থেকে লকডাউনের দু’সপ্তাহের মধ্যে ছাঁটাই হতে পারেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। তাঁর কথায়, বর্তমানে কিছু সংখ্যক কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হলেও, আসল বেকারত্ব আরও বাড়তে পারে। যা আর কিছু দিন পরে বোঝা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতে বিশ্বাসযোগ্য হাই ফ্রিকোয়েন্সি জব ডেটার অভাব রয়েছে। CMIE এর বিভিন্ন সমীক্ষা নিয়ে অতীতে প্রচুর রাজনৈতিক মতভেদ দেখা গিয়েছে। সরকার পক্ষ খোদ এই সমীক্ষার মেথডোলজি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন সেই বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে জানান আগামী দিনে বেকারত্ব অনেকটাই বাড়তে পারে। দেশের আরও বেশ কয়েকজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদও জানিয়েছেন, CMIE এর এই বেকারত্বের পরিসংখ্যানে অবাক হওয়ার মতো কিছুই নেই। লকডাউন শেষ হলে কাজ হারানোর হার বাড়ার প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে।
CMIE এর এই জব সার্ভে প্রায় ৯ হাজার নমুনা নিয়ে তৈরি। দু’সপ্তাহের হিসেবে এই রিপোর্ট তৈরি হলেও পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য বলে দাবি করছেন CMIE এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ একজিকিউটিভ মহেশ ব্যাস।
আরও জানতে ক্লিক করুন, স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতীয় অর্থনীতি, কেন বলছেন রঘুরাম রাজন?
শুধু ভারতই নয়, করোনা মহামারির জেরে বিভিন্ন দেশেই নাগাড়ে কর্মী ছাঁটাই, কাজ হারানোর ছবি উঠে আসছে। এই মুহূর্তে করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত আমেরিকার প্রায় ১ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে। এছাড়া উন্নত অর্থনীতির সবকটি দেশেই একই ছবি।
ভারতে মোট কর্মী সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। অর্থনীতির বিপর্যয় শুরু হলে এঁরাই প্রথম সমস্যায় পড়বেন। কারণ, এঁদের কাজের নিরাপত্তা নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রের পর যাঁদের চাকরি বা কাজে কোপ পড়তে পারে, তাঁরা বিভিন্ন সংস্থা, ফার্ম কিংবা সরকারি অফিসে কর্মরত। মহামারির পর মানুষের হাতে নগদ অর্থের টানাটানি হতে পারে, কমতে পারে চাহিদা। ফলে অর্থনীতির উপর আসতে চলেছে বিপুল চাপ।
Comments are closed.