রাজ্যে করোনা প্রবণ ৭ টি এলাকা চিহ্নিত, মৃত্যু বেড়ে ৫, কিছু ক্ষেত্রকে ছাড়ের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর, ‘নিজের খেয়াল রাখবেন’, মমতাকে বললেন অভিজিৎ ব্যানার্জি

রাজ্যে করোনাভাইরাসে মৃত বেড়ে ৫, আক্রান্ত ৬৯ জন। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নতুন করে করোনা আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৪ জনই একটি পরিবারের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আক্রান্তদের পরিবারের মধ্যেই নতুন করে করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যের ৭ টি এলাকার কথা বলেন। ম্যাপে এই ৭ টি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে করোনাভাইরাসের দাপট তুলনামূলকভাবে বেশি। সেই ৭ টি জায়গা বা Hotspot এর মধ্যেই যাতে করোনাকে বন্দি রাখা যায়, সেজন্য মানুষের সহযোগিতা চান মমতা। তবে সেই জায়গাগুলোর নাম জানাননি মুখ্যমন্ত্রী। এই জায়গাগুলির নাম জানিয়ে দেওয়া হলে মানুষের মধ্যে অহেতুক প্যানিক তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।  মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ৭ টি Hotspot এর পাশাপাশি অন্যান্য জায়গাতেও করোনা মোকাবিলার কাজ চলবে। কোথাও এতটুকু ঢিলে দেওয়ার প্রশ্ন নেই, জানান মমতা ব্যানার্জি।

টানা লকডাউনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে। কার্যত থমকে গিয়েছে দেশের বৃহত্তম এই কর্মক্ষেত্র। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মমতা জানান, রাজ্যে ফুল বাজার খুলে দেওয়া হচ্ছে। চালু থাকবে কিষাণ মাণ্ডি ও কৃষক বাজার। পাশাপাশি বিড়ি শ্রমিকরা পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে বাড়িতে বসে কাজ করতে পারবেন বলেও এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রেশন দোকানের কর্মীদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, দয়া করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষকে খেপানোর চেষ্টা চলছে বলেও এদিন ফের অভিযোগ করেন মমতা। এটা ফেক নিউজ করার সময় নয়। দয়া করে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করবেন না। এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার সময়, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

লকডাউন উঠে গেলে কী হবে, তা নিয়েও এদিন নিজের মত জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, লকডাউন উঠে গেলে কি হুড়মুড় করে সবাই আসতে শুরু করবেন? কীভাবে কী করা হবে তা নিয়ে কেন্দ্র এখনও কোনও নির্দেশিকা দেয়নি বলে জানান তিনি। তবে বাইরে থেকে এলে প্রথমে রাজ্যের সেফ হাউসে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

সোমবার গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি বোর্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। মঙ্গলবার সেই বোর্ডের নেতৃত্বে থাকা অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি এদিন সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে হাজির ছিলেন। নোবেলজয়ী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। তাদের অনুসরণ করলে ভালো। রাজ্যে বাজার খোলার সিদ্ধান্তের সাধুবাদ জানিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রতিটি হাট কিংবা বাজারের ঢোকা-বেরোনোর জায়গায় হাত ধোয়ার সরঞ্জাম রাখলে ভালো হয়। তাতে সকলে অন্তত ন্যূনতম সুরক্ষার উপায় পাবেন।

করোনা পরবর্তী অর্থনীতিকে লাইনে ফেরাতে গ্লোবাল বোর্ড গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সেই বোর্ডের নেতা অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নিজে কথা বলেন। এছাড়াও বোর্ডে থাকবেন ডাক্তার স্বরূপ সরকার, অর্থনীতিবিদ টম ফ্রিডম, অর্থনীতিবিদ জিষ্ণু দাস, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার জে বি আর প্রসাদ রাও, সিদ্ধার্থ দুবে, ডাক্তার সুকুমার মুখার্জি ও ডাক্তার অভিজিৎ চৌধুরী প্রমুখ।

নিজের হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যেভাবে নিজের রাজ্যের জন্য সময় বের করছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিজিৎ বিনায়ককে নিজের শরীরের খেয়াল রাখতে বলার পাশাপাশি আগাম নববর্ষেরও শুভেচ্ছা জানান মমতা ব্যানার্জি। নোবেলজয়ী মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা বলেন, আমরা ঘরে বসে কাজ করি। কিন্তু আপনাকে দেখছি সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতে। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনাকে নিয়েই যত চিন্তা।

Comments are closed.