আমপান বিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠনে ৬২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাজ্যের, যে যেভাবে পারেন সাহায্য করুন, দেশবাসীকে আবেদন মমতার
আমপান বিধ্বস্ত বাংলায় পুরোদমে ত্রাণ ও পুনর্বাসন শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার বিপর্যয়ের সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই কোষাগার থেকে ৬২৫০ কোটি টাকা খরচের প্রক্রিয়া শুরু করে ফেলল রাজ্য সরকার। জেলা পুননির্মাণের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুদান এবং সহায়তা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ওই অর্থ। পাশাপাশি রাজ্যবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী ফের জানালেন সহায়তার আবেদন। শুক্রবারই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজ্যের আমপান ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লক্ষ পরিবারের হাতে প্রথম পর্যায়ের অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হয়।
আমপান তাণ্ডবে বাড়ি ভেঙেছে ১০ লক্ষেরও বেশি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে বাড়ি মেরামতি বা গড়ে তোলার জন্য ২০ হাজার টাকা করে সরকারি অর্থ সাহায্য করা হবে। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁদের সরকারি সহায়তার পরিমাণ বাড়ি প্রতি ৪৮ হাজার টাকা। এদিনই মোট বাড়ি ভেঙে যাওয়ার মানুষদের অর্ধেককে অর্থাৎ ৫ লক্ষ পরিবারের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। বাকি ২৮ হাজার টাকা সেই পরিবার পাবে ১০০ দিনের কাজের মজুরির মধ্যে দিয়ে। প্রথম দফায় ৫ লক্ষ পরিবারের হাতে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী দফায় আবার বাকি ৫ লক্ষ পরিবার টাকা পাবে।
কৃষকদের জন্যও অর্থসাহায্য ঘোষণা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ২০ লক্ষ কৃষকের জন্য রাজ্য সরকার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সেই অনুযায়ী এক একজন কৃষক একর প্রতি দেড় হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান পাবেন।
পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ অংশে পানের চাষ হয়। কিন্তু অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে এই জেলাগুলোর পানের বরোজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পান চাষিদের সুবিধার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১ লক্ষ পানের বরোজের জন্য তাঁর সরকার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রথমেই ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিরা ৫ হাজার টাকা করে নগদ অনুদান পাবেন। তারপর ১৫ হাজার টাকা করে ১০০ দিনের কাজের মধ্যে দিয়ে পাবেন।
এছাড়াও বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত, স্কুল, কলেজ, শৌচাগার, পাঠাগার পুনর্নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তা সারাই, নির্মাণ সহ বিভিন্ন পুনর্বাসন প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে প্রথম দফায় ৬২৫০ কোটি টাকা ডিসবার্স করে দেওয়া হল, জানান মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য অর্থ খরচে কোনওরকম কার্পণ্য করবে না। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনের জেরে রাজ্যের কোষাগারে কোনও নতুন অর্থ ঢুকছে না। কিন্তু খরচ ক্রমেই আকাশ ছোঁয়া। এই পরিস্থিতিতে আমপান বিধ্বস্ত ৬ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার কাছে আবেদন করেন তিনি। বলেন, যে যেভাবে সহায়তা করতে চান, করুন। এই প্রসঙ্গেই মমতা ব্যানার্জি নসুর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় আমপান তহবিলে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। পাশাপাশি মমতা জানান, প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও তাঁর একমাসের পেনশনের টাকা রাজ্যের ত্রাণ তহবিলে তুলে দিয়েছেন। দু’জনকেই কৃতজ্ঞতা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
Comments are closed.