রৌণক ২১ লক্ষ টাকার চাকরি ফিরিয়েছেন প্রস্তুতি নিতে, চাকরি করেই প্রস্তুতি নেহার! কলকাতার ২ কৃতি ইউপিএসসির প্রথম ২০ তে
গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় প্রথম কুড়িতে জায়গা করে নিলেন কলকাতার দুই পরিক্ষার্থী। আমলা হিসেবে তাঁরা কাজ করতে চান বাংলাতেই।
মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) পরীক্ষার ফল। তাতে এ রাজ্য থেকে যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছেন রৌণক আগরওয়াল ও নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়। রৌণকের সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ১৩ এবং নেহা রয়েছেন ২০তম স্থানে।
এবার ইউপিএসসি’তে সফল হয়েছেন মোট ৮২৯ জন। গত কয়েক বছরে এ রাজ্য থেকে ইউপিএসসিতে প্রথম ১৫ র মধ্যে কেউ আসেননি। এবার তা করে দেখালেন রৌণক ও নেহা। কেমন ছিল তাঁদের পড়াশোনার রুটিন? কোন স্ট্র্যাটেজিতে ইউপিএসসি’র কঠিন হার্ডল পার করলেন দুই কলকাতাবাসী?
রৌণক আগরওয়ালের বাড়ি উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটে। নোপানি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছেন তিনি। ছোট থেকেই সমস্ত পরীক্ষায় ভালো ফল করা রৌণক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বাণিজ্য শাখায় প্রথম হয়েছিলেন। এরপর তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ঢোকেন বি কম পড়তে। সেখানেও দুর্দান্ত রেজাল্ট। পেয়েছিলেন গোল্ড মেডেল। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পরীক্ষাতেও দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেন তিনি। তার পর চার্টার্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট পরীক্ষাতেও সফল হন।একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ২১ লক্ষ টাকা বেতনের চাকরির অফার হেলায় ফিরিয়ে দেন রৌণক। কারণ, ছোট থেকে আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখা রৌণকের মনে হয়েছিল এই চাকরিতে ঢুকে পড়লে ইউপিএসসি’র প্রস্তুতি ভালো করে নিতে পারবেন না। সে জায়গায় টিউশন পড়ানো শুরু করেন তিনি। তাতে নিজের পকেট খরচও উঠে আসছিল এবং পড়াশোনার অভ্যেসের মধ্যেই থাকা হচ্ছিল। ইউপিএসসি পরীক্ষায় ১৩ তম স্থান দখল করা রৌণকের কথায়, শুধু হার্ড ওয়ার্কিং হলে চলবে না, হতে হবে স্মার্ট ওয়ার্কিংও। কোন জিনিসটা ভালো করে পড়তে হবে, কীভাবে ঠিক সময় ঠিক উত্তর দিতে পারব, সেটা নিজেকেই বুঝতে হবে জানান তিনবারের চেষ্টায় ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হওয়া রৌণক। সেই অনুযায়ী তৈরি করতে হবে স্ট্যাটেজি। রৌণক বলেন, নিজে কতটা পারছি, তার মূল্যায়ন বারবার করে যেতে হবে। স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া রৌণক চান আমলা হিসেবে এ রাজ্য থেকেই কাজ করতে। সেই রকম অপশনই দিয়েছেন বলে জানান রৌণক।
রৌণকের বাবা রমাকান্ত আগরওয়ালের বড়বাজারে গুড়ের ব্যবসা রয়েছে। ছেলের এই দুর্দান্ত সাফল্যে মা সুশীলা এবং বাবা রমাকান্ত দু’জনেই উচ্ছ্বসিত।
অন্যদিকে ইউপিএসসি পরীক্ষায় ২০ তম এবং রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান পাওয়া নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য চাকরি করতে করতেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এবং প্রথম বারেই সফল হয়েছেন। যাদবপুরের সেন্ট্রাল পার্কের বাসিন্দা নেহা কারমেল কনভেন্ট থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। তারপর সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়াশোনা শেষে খড়গপুর আইআইটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি গানেও চৌখস নেহা। আইআইটিতে পড়ার সময় কলেজের ব্যান্ড-এ গান গাইতেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাট চুকিয়ে নয়ডাতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করছিলেন এতদিন। সেই সঙ্গে চলত ইউপিএসসি’র প্রস্তুতি।
যাদবপুরের বাড়িতে একাই থাকেন নেহার মা অনিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় গত হয়েছেন নয় বছর আগে। নেহার কথায়, জীবনের সমস্ত মোটিভেশন পেয়েছি বাবার কাছ থেকেই। আর মা এখন আমার সব কিছু কাজ করার মূল উৎসাহ। ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর পরামর্শ, টিউশন বড় ব্যাপার নয়, নিজে কতটা পড়াশোনা করছি সেটাই আসল। তিনি বলেন, ইউটিউব, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনেক ভিডিও পাওয়া যায়, অনেক স্টাডি মেটেরিয়াল আছে। সেগুলো দেখে নিজেই মতো পড়তে হবে। তাছাড়া দরকার অসম্ভব ইচ্ছে। এই বাঙালি কন্যাও জানান, পশ্চিমবঙ্গের ক্যাডার হতে চেয়েই ইন্টারভিউতে অপশন দিয়েছিলেন।
রাজ্যের সফল দুই পরীক্ষার্থীকে ট্যুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
Comments are closed.