শুক্রবার লোকসভায় আস্থা ভোট। শনিবার ২১ শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দিল্লি দখলের ডাক দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লোকসভায় বিরোধী দল কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে যখন দিল্লির রাজনীতি সরগরম, তখন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চকেই মোদী সরকারের বিরোধিতার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবারের শহিদ সমাবেশ থেকেই কার্যত সামনের লোকসভা ভোটে দিল্লি দখলের ডাক দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে কয়েকদিন আগেই পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে পরপর অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদীর জনসভা এবারের ২১ শে জুলাইয়ের সমাবেশকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। মেদিনীপুরের যে কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী মিটিং করেছেন, সেখানেই অগাস্টের শুরুতে পালটা জনসভারও প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বুধবারই লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে কংগ্রেস এবং তেলেগু দেশম পার্টি। কিন্তু শুক্রবার এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সংসদে যে বিজেপিকে চাপে ফেলা যাবে না তা বিরোধীরা ভাল করেই জানে। লোকসভায় মোট ৫৪৪ টি আসনের মধ্যে এই মুহূর্তে ৫৩৪ জন সাংসদ রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে লাগবে ২৬৮ জন সাংসদের সমর্থন। এনডিএ’র এই মুহূর্তে সাংসদ সংখ্যা ৩১৪, তার মধ্যে বিজেপির রয়েছেন ২৭৩ জন। বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেসের ৪৮, তৃণমূল কংগ্রেসের ৩৪ এবং টিডিপি’র ১৬ জন সাংসদ রয়েছেন। এর বাইরে এআইএডিএমকে’র ৩৭ জন, বিজেডি’র ২০ জন এবং টিআরএস’এর ১১ সাংসদ অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে দাঁড়াবেন এমন আশা কম। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাবের সুবিধে নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে একটা অনৈক্যের চেহারা তুলে ধরার সুযোগ বিজেপি শিবির পেয়ে যাবে বলেই তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে। তাই অনাস্থা প্রস্তাবে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও, সুব্রত বক্সি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাদে দলের সমস্ত সাংসদকে অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনা এবং ভোটাভুটিতে থাকার ব্যাপারে হুইপ দিয়েছে দল। শনিবার ২১ শে জুলাই সভার প্রস্তুতির জন্য সুব্রত বক্সি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ২১ শে জুলাই সমাবেশ থেকেই পুরোদস্তুর আগামী লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর ২১ শে জুলাই সমাবেশেও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘যেখানে যে দল শক্তিশালী সেখানে সেই দল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে’। তারপর গত এক বছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছু বদল এসেছে। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং বিএসপি নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে একাধিক সিটের উপনির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়েছে। বিহারেও একই ঘটনা ঘটেছে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতার ফলে। এরই মধ্যে এবছর বিজেপি বড় ধাক্কা খায় কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে। সব মিলে বিরোধী ভোট ভাগ না হলে বিজেপিকে ধাক্কা দেওয়া সম্ভব বলেই মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থতিতে লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে শনিবারের সমাবেশ থেকে একদিকে যেমন জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল নেত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার বার্তা দেবেন, পাশাপাশি রাজ্যেও ৪২ টি লোকসভা আসনকেই তিনি পাখির চোখ করতে চাইবেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
সূত্রের খবর, জুলাই মাসের শেষ থেকেই পরপর জেলা সফর শুরু করে দেবেন তৃণমূল নেত্রী। অগাস্ট মাসের শেষে শুরু হবে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন। সেই বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে কোথাও যেন গণ্ডগোল না হয় তা নিয়েও ব্লক এবং জেলা স্তরের নেতাদের তৃণমূল নেত্রী এই মঞ্চ থেকে বার্তা দেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের পরই লোকসভা ভোটের কাজে দলকে পুরোপুরি নামিয়ে দিতে। পাশাপাশি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য মামলায় সিবিআই তদন্তে ফের গতি আসতে পারে বলে তৃণমূল শিবিরের কাছে খবর। এব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সিবিআই তদন্তে কী হল না হল তাতে আর কিছু এসে যায় না। কারণ, নির্বাচন এলেই কেন্দ্র যে সিবিআইকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তা রাজ্যের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেত্রীর আশঙ্কা বিজেপি লোকসভা ভোট নির্দিষ্ট সময়ের থেকে এগিয়েও আনতে পারে। সেই কারণে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের পরই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে দলকে মাঠে নেমে পড়ার নির্দেশ দেবেন তিনি। বিশেষ করে যে জায়গাগুলিতে পঞ্চায়েতে খারাপ ফল হয়েছে সেখানে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। সাংগঠনিক দায়িত্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অদল-বদল হতে পারেও বলে তৃণমূল শিবিরের খবর।