প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থনের বার্তা হাইকমান্ডের, রাজ্যের একাধিক কংগ্রেস নেতা কি বিজেপির পথে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা মায়াবতী প্রধানমন্ত্রী হলে আপত্তি নেই, জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাবে দিশেহারা অবস্থা রাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে জোটপন্থী কংগ্রেস নেতাদের। আর তাঁদের থেকেও খারাপ অবস্থা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সেই সিপিএম নেতাদের যাঁরা ভবিষ্যতেও কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পক্ষে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারা যে পারস্পরিক সমঝোতার মধ্যে দিয়ে এরাজ্যে রাজনীতি করছেন, তা যে লোকসভা ভোটের আগেই বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে কারও কারও মনে। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লি কংগ্রেসের সমঝোতা হলে রাজ্যে কংগ্রেসের কোনও কোনও নেতা কি বিজেপির দিকে পা বাড়াবেন, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজে তীব্র তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী। ২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগে সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেন। সেই জোটের ফলে রাজ্যে আসন সংখ্যার নিরিখে কংগ্রেস সিপিএমের থেকে কিছু বেশি লাভবান হলেও তা যে সাময়িক ছিল এখন তাও বুঝতে পারছেন তিনি। কারণ, তাঁর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ তো বটেই, অন্যান্য জেলা থেকেও বহু বিধায়ক ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। কংগ্রেস হাইকমান্ডও বুঝতে পারছে, সিপিএমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা যেতেই পারে, কিন্তু আগামী লোকসভা ভোটে আসন সংখ্যার নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিজেপি সরকার গড়তে না পারলে, জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠবেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সেই পরিস্থিতিতে কম আসন থাকা সত্ত্বেও কর্ণাটকে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস যেভাবে কুমারস্বামীকে সমর্থন জানিয়েছে, তারই পুনরাবৃত্তি হতে পারে ২০১৯ পরবর্তী জাতীয় রাজনীতিতেও।
জাতীয় রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, এই মুহূর্তে দেশের এবং পশ্চিমবঙ্গের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি এবং কংগ্রেসের পর তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে আসবে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, আরজেডি মিলে যদি উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে ভাল ফল করে সেক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষে দিল্লিতে সরকার গড়া সহজ হবে না। কংগ্রেস হাইকমান্ডের হিসেব, সিপিএম যাই আসন জিতুক না কেন, স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে থাকবে। আর লোকসভা ভোটের পর বিজেপিকে ঠেকানোর পরিস্থিতি তৈরি হলে, কার কত লোকসভা সিট রয়েছে, তাই হয়ে উঠবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি। সেক্ষেত্রে বাকি আঞ্চলিক দলগুলির তুলনায় এগিয়ে থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। তখন বিজেপির সরকার গড়া ঠেকাতে কর্ণাটকের মতো আঞ্চলিক দলগুলির ব্লককে সমর্থন করতে বাধ্য থাকবে কংগ্রেস।
দলের হাইকমান্ডের এই মনোভাবের কথা আন্দাজ করতে পারছেন রাজ্যের তৃণমূল বিরোধী কংগ্রেস নেতারাও। সূত্রের খবর, রাজ্যের এমন একাধিক কংগ্রেস নেতা ইতিমধ্যেই গোপনে বিজেপির সঙ্গে কথাবার্তাও শুরু করেছেন। এর মধ্যে একজন সাংসদ তো বটেই, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলে অন্তত ৫-৬ জন কংগ্রেস বিধায়ককে টার্গেট করেছে বিজেপি। আবার বিধায়ক কিংবা সাংসদ নন, এমন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাকেও দলে টানতে আগ্রহী বিজেপি। বিজেপি চাইছে, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করার ধারাবাহিকতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে এমন কিছু কংগ্রেসি নেতাকে দলে নিয়ে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও জোরদার করতে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, এখন সবাই অপেক্ষা করছেন দেখার জন্য আগামী এক-দু’মাসে রাজনীতি কোন দিকে যায়। পুজোর পরেই হয়তো কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।