বিজেপি নেতৃত্বকে ‘মেগালোম্যানিয়াক’ বলে দিল্লিতে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রে সরকার বদলের ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এক সময় জাতীয় নির্বাচন কমিশনার টি এস শেষনকে ‘মেগালোম্যানিয়াক’ বলেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু। এবার বিজেপি নেতৃত্বকে ‘মেগালোম্যানিয়াক’ বলে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাও দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে। মঙ্গলবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার বদলের ডাক দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অসমের নাগরিকপঞ্জির প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ‘মেগালোম্যানিয়াক’ বলেও অভিহিত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি অসমে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে নাম বাদ যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। আমি চাই না কেউ যেন বঞ্চনার শিকার হয়।’
সোমবার অসমে নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, টিডিপিসহ প্রায় সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলই অসম সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এবং বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। সোমবারই এর বিরোধিতা করে দুপুরে দিল্লি যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের পাশের দাঁড়ান তিনি। বিজেপি ভাগাভাগির রাজনীতি করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। সেখানেই অসম প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন দিল্লির অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বাংলায় নাগরিকপঞ্জির কাজ করতে তিনি দেবেন না। কিন্তু অসমের মতো অনেক রাজ্যেই তা হওয়ার আশঙ্কা আছে। শুধুমাত্র ভোটের জন্য দেশের শাসক দল ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি নিয়েছে। ক্ষমতায় আছে বলে এরা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর পরই বিজেপি নেতৃত্বকে তিনি ‘মেগালোম্যানিয়াক’ বলে অভিহিত করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি অখণ্ড ভারত দেখতে চাই। কিন্তু বিজেপি দেশকে ভাগ করার চক্রান্ত করছে। সোমবারই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, বাংলায় ক্ষমতায় এলে তাঁরা এখানেও নাগরিকপঞ্জির কাজ করবেন। কারও নাম উল্লেখ না করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কত বড় ক্ষমতা আর ঔদ্ধত্য, এখন বাংলাতেও একই কাজ করার কথা বলছে। যারাই তাদের বিরোধিতা করবে তাদেরই দেশে থাকতে দেবে না, এই নীতি নিয়েছে বিজেপি।
এই সফরেই দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনেও বিজেপিকে আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, ‘ওরা ভাবছে আমার হল ঘরের ভাষণ বন্ধ করেই খুশি থাকবে। কিন্তু হল ঘরে নয়, রাস্তাতেই আমি স্বচ্ছন্দ। এদিন কনস্টিটিউশন ক্লাবে ভাষণের একেবারে শেষে ২০১৯ সালে সরাসরি দেশের সরকার বদলের ডাক দেন তিনি। বলেন, দেশে এই মুহূর্তে পরিবর্তন দরকার। দেশের ভালোর জন্যই দরকার এই পরিবর্তন।
বুধবার সংসদ ভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গেও তাঁর কথা বলার সম্ভাবনা আছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই ঐক্যবদ্ধ চেহারা নেওয়ার চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলি, যার নেতৃত্ব এখন অনেকটাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। গত সপ্তাহেও ওমর আবদুল্লা কলকাতায় এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অসমের নাগরিকপঞ্জির ইস্যুকে কেন্দ্র করে ফের এককাট্টা হওয়ার চেষ্টায় বিরোধীরা।