সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরছেন সীতারাম ইয়েচুরি? বুধবার হায়দরাবাদে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শুরুর দিন রাজনৈতিক দলিল পেশের সময় ইয়েচুরি যেভাবে প্রকাশ্যে বেইজ্জত হয়েছেন, তাতে তাঁর পক্ষে আর সাধারণ সম্পাদক থাকা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন অধিকাংশ নেতা। গত জানুয়ারি মাসে কলকাতায় সেন্ট্রাল কমিটির মিটিংয়েও দলের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে বিতর্কে ভোটাভুটি হয় এবং ইয়েচুরির প্রস্তাব হেরে যায়। কিন্তু বুধবার পার্টি কংগ্রসে যা ঘটল তাকে নজিরবিহীন বললেও কম বলা হয়।
সিপিএমে বরাবরের রেওয়াজ, পার্টি কংগ্রেসের প্রথম দিন সাধারণ সম্পাদক দলের রাজনৈতিক দলিল পেশ করেন। তারপর তা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বুধবার নজিরবিহীনভাবে রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করলেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। পরে ভাষণে ইয়েচুরি নিজের তত্ত্ব বলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর মত যে দলে সংখ্যালঘু তাও স্বীকার করে নিয়েছেন। সিপিএমের অধিকাংশ নেতারই মত, এই প্রকাশ্য সম্মানহানির পরে সীতারামের সাধারণ সম্পাদক থাকা আর সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজেই পদ থেকে সরে যাবেন। নয়তো পার্টি কংগ্রেসের শেষদিন ভোটাভুটিতে কারাট শিবির তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেবে। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, আর এত কিছুর পরেও যদি ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক থেকে যান, তবে তাঁকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে নতুন ‘সুপার জেনারেল সেক্রেটারি’ প্রকাশ কারাটই দল চালাবেন। আগামী লোকসভা ভোটের আগে যা ইয়েচুরির কাছে আরও অসম্মানজনক হবে।
সিপিএমে এই মুহূর্তে মূল বিতর্ক, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস নিয়ে অবস্থান কী হবে? প্রকাশ কারাটদের মত, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা কিংবা জোট করা যাবে না। অন্যদিকে বাংলার নেতৃত্ব এবং ইয়েচুরির অবস্থান, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তার খোলা রাখতে হবে। নয়তো, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে দল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। ২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগেও দলের রাজনৈতিক অবস্থান ভেঙে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিল। যা দলের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে পরে জানায় কেন্দ্রীয় কমিটি। যদিও কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার তত্ত্বে ইয়েচুরি এখনও অনড়। বুধবারের ভাষণেও সে কথা তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু তার আগেই রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করে এই তত্ত্ব খারিজ করে দেন ‘সুপার জেনারেল সেক্রেটারি’ কারাট।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক লাইন কী হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনও কারাট শিবিরই সংখ্যাগরিষ্ঠ। রাজনৈতিক লাইন নিয়ে বিতর্কে দলের সংখ্যালঘু অংশের প্রতিনিধিত্ব করা ইয়েচুরি পার্টি কংগ্রেসের ডেলিগেটদের কত অংশের সমর্থন জোগাড় করতে পারেন তার ওপরই নির্ভর করছে সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর ভবিষ্যৎ। কিন্তু পার্টি কংগ্রেসের প্রথম দিনের যা গতিপ্রকৃতি, তাতে বুধবার রাত থেকেই সিপিএমে আলোচনা শুরু হয়েছে, সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সীতারামের সরে যাওয়া এক প্রকার নিশ্চিত। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে?