নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন, বিরূপ প্রভাব ফেলেছে দেশের অর্থনীতিতে, প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ম
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে কড়া প্রভাব ফেলেছে। নিজের বইতে এমনই মত প্রকাশ করলেন দেশের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ম। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন, সেসময় মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে ছিলেন সুব্রমনিয়ম। নরেন্দ্র মোদী জমানায় বিগত চার বছর এই দায়িত্ব সামলানোর পর চলতি বছরের জুন মাসেই এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী অরবিন্দ সুব্রমনিয়মের পরামর্শ নিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে এতদিন জল্পনা চলছিল। এবার নিজের লেখা বই, ‘অফ কাউন্সেল, চ্যালেঞ্জেস অফ দ্য মোদী জেটলি ইকনমি’তে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। বইটিতে নোটবন্দি নিয়ে আলাদা একটা অধ্যায় রেখেছেন সুব্রমনিয়ম। সেখানে নোটবন্দি নিয়ে তাঁর পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল কিনা, তার সরাসরি জবাব না দিলেও তিনি লিখেছেন, যেভাবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল নজিরবিহীন। লিখেছেন, পূর্বে কয়েকটি দেশ অর্থনীতির হাল শোধরাতে বা রাজনৈতিক কারণে এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে (ভেনেজুয়েলা ২০১৬) বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ধাপে ধাপেও নোট বাতিল করা হয়েছে অতীতে। কিন্তু ৮ শতাংশের উপর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও কোনও জরুরিকালীন পরিস্থিতি ছাড়া যেভাবে একলপ্তে বাজার থেকে ১০০ ও ৫০০ টাকার নোটের মাধ্যমে প্রায় ৮৬ শতাংশ নগদ টাকা ২০১৬ র ৮ নভেম্বরের পর তুলে নেওয়া হয়েছিল, তার নজির কোথাও নেই।
দেশের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ওই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ৬ এর গণ্ডিতে নেমে এসেছে। লিখেছেন, নোট বাতিলের আগে শেষ ছ’টি ত্রৈমাসিক ফলাফলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি গড়ে যেখানে ৮ শতাংশ ছিল, নোট বাতিলের পর শেষ সাতটি ত্রৈমাসিক আর্থিক ফলাফলে তা নেমে এসেছে গড়ে ৬.৮ শতাংশে। অর্থাৎ, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ক্ষত এখনও বর্তমান দেশের অর্থনীতিতে। সুব্রমনিয়ম আরও বলেছেন, এবিষয়ে কোনও সংশয় নেই যে এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও জিডিপিতে, কিন্তু সেই প্রভাব ঠিক কতটা, ২ শতাংশ নাকি তার কমবেশি তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে। তাঁর মতে, নোট বাতিল ছাড়াও, জিএসটি, মূল্য বৃদ্ধি, চড়া সুদের হার এসবের মিলিত প্রভাব এখনও দেশে বর্তমান। সরকারকে খোঁচা দিয়ে তাঁর লেখা, সব কিছুর মাঝে একটা ভালো খবর যে, নগদ লেনদেন ছেড়ে মানুষ কিছু ডিজিটাল লেনদেনের দিকে ঝুঁকেছে এই অর্থনৈতিক কম্পনের ফলে। নোট বাতিলকে ‘আনলাইকিয়েস্ট ইকনমিক এক্সপেরিমেন্ট’ বলেছেন সুব্রমনিয়ম নিজের লেখা বইতে।
নোট বাতিলের সময় বারবার সাফাইয়ের সুরে কেন্দ্রের তরফে একটা কথা বলা হয়েছিল, এর ফলে গরিব, মধ্যবিত্তের স্বল্প সময়ের জন্য হয়তো কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু আসল ক্ষতি হবে বড়লোক-বিত্তশালীদের, যাদের কালো টাকা বা বেআইনি অর্থ আছে। নিজের বইতে সরকারের এই দাবিকে মোক্ষম কটাক্ষ করেছেন সুব্রমনিয়াম। লিখেছেন, এটা অনেকটা আমার ছাগল গেছে তো যাক ওদের তো গরু গেছে, এরকম সান্তনা দেওয়ার মতো কথা। কিন্তু এর ফলে গরিব, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তাদের ক্ষতি হয়েছে, যা এড়ানো সম্ভব হয়নি, এটাই বাস্তব।
Comments are closed.