রামকে নিয়ে বইয়ে তথ্য বিকৃত করার অভিযোগে কন্নড় লেখককে কে এস ভগবানকে গ্রেফতারির দাবি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের
রামকে নিয়ে বই লিখে এবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রোষানলে প্রখ্যাত কন্নড় লেখক ও অধ্যাপক কে এস ভগবান। তাঁকে গ্রেফতারির দাবি তুলে সরব হয়েছে কর্ণাটকের একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। বিশিষ্ট লেখক এবং অধ্যাপক কে এস ভগবান সম্প্রতি ‘রাম মন্দির ইয়াকা বেদা’ (কেন রাম মন্দির প্রয়োজনীয় নয়) নামে একটি বই লেখেন। সেখানে তিনি লেখেন ‘রাম কোনও দেবতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো রক্ত মাংসের মানুষ। তাঁরও অন্যান্য মানুষের মতো দুর্বলতা ছিল।’
কে এস ভগবানের পর্যালোচনা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। লেখকের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। গত শুক্রবার অতি দক্ষিণপন্থী এবং হিন্দুত্ববাদী একাধিক সংগঠন কর্ণাটকে একযোগে সভা করে কে এস ভগবানের কড়া সমালোচনা করে। দাবি তোলা হয়, তাঁর গ্রেফতারের। তাদের অভিযোগ, লেখক রামকে অপমান করে হিন্দু ভাবাবেগে যেমন আঘাত করেছেন, তেমনই মহাত্মা গান্ধীর মতো মনীষির মিথ্যে মূল্যায়ন করে তাঁর চরিত্রকে ছোট করার চেষ্টা করেছেন এই বইয়ে। লেখকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে হিন্দু জাগরণ বৈদিক মাইসুরু নামক সংগঠনের জেলা সভাপতি কে জগদীশ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই বইয়ে ভাগবত গীতা থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতিকে বিকৃত করা, রামকে ছোট করা ও গান্ধীজিকে হীন প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য লেখক ভগবান দাবি করেছেন, তিনি কোনও কিছুই বিকৃত করেননি এবং করার চেষ্টাও করেননি। বাল্মিকী রচিত রামায়ণের ওপর ভিত্তি করেই এই বই লিখেছেন তিনি। যদিও, এসব শুনতে নারাজ হিন্দুত্ববাদীরা। তারা পালা করে লেখকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছে। এপ্রসঙ্গে কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী নীরব তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তারা। কর্ণাটকের প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা বিধায়ক সুরেশ কুমার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন কে এস ভগবানের বিরুদ্ধে। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘হয় কে এস ভগবানকে সরকার গ্রেফতার করুক, নয়তো তাঁকে মানসিক চিকিৎসালয়ে পাঠানো হোক ।’
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন এই বিখ্যাত লেখক। ২০১৫ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি মহীশুরে একটি সভায় কে এস ভগবান মন্তব্য করেছিলেন, ভাগবত গীতার কয়েকটি পৃষ্ঠা তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান। ভাগবত গীতার নবম অধ্যায়ের ৩২ এবং ৩৩ শ্লোকে যেখানে মহিলা, বৈশ্য এবং শূদ্রকে পাপী বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে সেই অংশকে জনসমক্ষে পুড়ে ফেলার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন ভগবান। এই মন্তব্যের পরও হিন্দুত্ববাদীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় লেখকের জন্য।
Comments are closed.