ধনঞ্জয় থেকে বিরিঞ্চি বাবা! চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রবি ঘোষ, তার অভিনীত চরিত্ররা আজও দর্শকদের মাঝে জীবন্ত
বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে ইতিহাসে রবি ঘোষের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তার অভিনীত চরিত্ররা আজও দর্শকমহলে জীবন্ত। তিনি সেই সময়ের বাংলা সিনেমা জগতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন তা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই। মজার চরিত্রে অভিনয় করতে তাকে বেশি দেখা যেত। পর্দায় তার আবির্ভাবই হাসাতো আপামর দর্শকদের। তিনি তার অভিনয় জীবনে এমন কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছেন যা আজও মানুষ মনের মনিকোঠায় ধরে রেখেছেন। তাদের মধ্যে থেকেই কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্রের কথা তুলে ধরব আপনাদের সামনে।
১) বাঘা: সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে বাঘার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল রবি ঘোষকে। এই চরিত্র দর্শকমহলে তার একটা অন্য জায়গা তৈরি করেছিল। তার সেই জায়গা আজও আট থেকে আশি সকলের মধ্যে বজায় রয়েছে। বহু মানুষের কাছে তিনি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’এর বাঘা নামে পরিচিত। গুপী গাইনের সাথে বাঘা বাইন ভূতের রাজার বর পেয়ে একের পর এক অসাধ্য সাধন করে গিয়েছে ছবিতে। যা নিঃসন্দেহে এক অমর সৃষ্টি।
২) হরিদাস: যারা সিনেমার ভক্ত তারা ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’এর হরিদাসকে এক নামেই চিনবেন। ‘হরিদাসের বুলবুলভাজা টাটকা তাজা খেতে মজা’, এটি অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। হরিদাস বুলবুল ভাজতে খুব ভালোবাসতো। তার বুলবুলভাজা খেয়ে মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং রানী ভিক্টোরিয়াও। সেই চরিত্র আজও মানুষের মনে রয়ে গিয়েছে।
৩) ধনঞ্জয়: একটি পরিবার কেন্দ্রিক ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’। এই ছবিতে হঠাৎ করেই ধনঞ্জয় নামের এক রাঁধুনি বাড়িতে এসে সকলের সমস্ত সমস্যা উধাও করে দেয়। সকলের কাছে সে হয়ে ওঠে মাসিহা। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই সমস্ত কাজ করে ফেলতো সে। শেষে পরিবারের সকলকে এক করে দিয়ে সে চলে যায় অন্য কোথাও। যে ছবি তার নিজ গুনে আজও মানুষ মনে থেকে গিয়েছে।
৪) বিরিঞ্চি বাবার অ্যাসিস্টেন্ট: ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’ ছবিতে বিরিঞ্চিবাবা অ্যাসিস্ট্যান্টের চরিত্রে রবি ঘোষের অভিনয় অন্যতম। তার এই চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় আজও মানুষ মনে রেখে দিয়েছেন। ভন্ড সাধুর চরিত্রে তার সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করেছিল আপামর দর্শকদের, যা আলোচিত আজও।
৫) শেখর: ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ চার বন্ধুর গল্প। তারমধ্যে রবি ঘোষ শেখরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। চাকরি না থাকা এক যুবক নিজের বন্ধুদের নিয়ে বেশ ভালোই কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। সবকিছুর মধ্যে থেকেও নিজেকে সংযত রেখে ব্যালেন্স করে চলাতে দক্ষ ছিল শেখার। অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতে শেখরের ভূমিকায় অভিনয় মনে রাখার মত।
এছাড়াও এমন একাধিক চরিত্রের কথা উল্লেখ করা যায় যেখানে তার অভিনয় ছিল অনবদ্য। রবি ঘোষ চলচ্চিত্র জগতের শুধুমাত্র একজন তারকা ছিলেন না তিনি এক অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন। নায়ক না হয়েও নিজের পরিচিতি মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা যায় তা নিজেই প্রমাণ করেছেন। মজার চরিত্রে অভিনয় করতে তিনি বেশি পছন্দ করতেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে আজীবন।
Comments are closed.