একসময় অভাবের সংসার চালাতে হোটেল রেস্তোরার ওয়েটারের কাজ করতে হয়েছিল থ্রি ইডিয়ট ছবির অভিনেতা বোমান ইরানি কে! বোমান ইরানির জীবন যেন এক আস্ত সিনেমা, প্রতিভার জোরে আজ বলিউড সেলিব্রিটি বোমান ইরানি
মুন্নাভাই এমবিবিএস হোক বা 3 ইডিয়টস, সঞ্জয় দত্ত এবং আমির খানকে প্রধান ভূমিকায় দেখা গেলেও ছবির পার্শ্ব চরিত্রে বরাবরই যিনি মন জয় করেছিলেন তিনি হলেন বোমান ইরানি। সম্প্রতি ৬১ বছরে পা রাখলেন জনপ্রিয় অভিনেতা। মহারাষ্ট্রের এক পার্সি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেতা। ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা ছিলো তার। অভিনেতার জন্মের আগেই তার বাবা মারা গেছেন মাত্র ২৮ বছর বয়সে। তার মা তাকে একার হাতেই মানুষ করেছেন। মুম্বাইয়ের সেন্ট মেরিজ স্কুলেই নিজের পড়াশুনা শেষ করেছেন তিনি। এরপর পলিটেকনিক কোর্স সম্পন্ন করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তাজ হোটেলে যোগদান করেন তিনি। মুম্বাইয়ের গ্রান্ড রোডে অপ্সরা সিনেমার কাছে তাদের একটি বেকারির দোকানও ছিল, টাকা রোজগারের জন্য বেকারির দোকানেও কাজ করেছেন বোমন।
ছোটবেলায় অভিনেতার কথা বলার মধ্যে সমস্যা ছিল তার কোন কথাই স্পষ্ট ভাবে বোঝা যেত না। যার কারণে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। ডিসলেক্সিয়ার শিকার ছিলেন তিনি। এছাড়াও তার মানসিক রোগ ছিল, যার কারণে বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতেন সব সময়। তার কথা বলার এই সমস্যা দূর করতে তার মা তাকে সিনেমা দেখাতে শুরু করে।
তারপর স্কুল-কলেজ সব জায়গাতেই তিনি অভিনয় যোগ দিতেন কলেজ পাশ করার পর তিনি বোমান তাজমহল প্যালেস অ্যান্ড টাওয়ারে ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে বোমন দুই বছরের জন্য ওয়েটার ও রুম সার্ভিসের দায়িত্ব নেন। কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা ও সততা দেখে পদোন্নতি পান। এরপর তিনি ফ্রেঞ্চ রেস্তোরাঁ রেন্ডেজভাসে ওয়েটার হিসেবেও কাজ করেন। তাজ প্যালেসে কাজ করার সময় বোমান গ্রাহকদের দেওয়া টিপস সংগ্রহ করতেন। এই টাকা দিয়ে সে ক্যামেরা নিয়ে স্কুলের ক্রিকেট-ফুটবল ম্যাচের ছবি তুলতেন। আর সেখান থেকে টাকা জমিয়ে সপরিবারে উটি ঘুরতে গিয়েছিলেন তারা।
পারিবারিক ব্যাবসার সূত্রেই বর্তমান জীবন সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ হয় তার। বোমানের স্ত্রীর নাম জেনোবিয়া ইরানি। বোমান ২০০০ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ডরনা মানা হ্যায় ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবিতে বোমন খুব কম স্ক্রিন স্পেস পেয়েছিল কিন্তু তার কাজ নজরে আসে এবং তারপরে বোমনের ভালো দিন শুরু হয়। এরপর বোমন মুন্নাভাই এমবিবিএস ছবিতে ডাঃ জেসি আস্থানার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই চরিত্রে দর্শকদের মন জয় করেছেন বোমন। ২০০৯ সালের 3 ইডিয়টস চলচ্চিত্রেও বোমানের কাজ অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল। এই ছবিতে তিনি বীরু সহস্ত্রবুদ্ধে ওরফে ‘ভাইরাস’-এর সেরা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই চরিত্রের জন্য বোমানকে এখনও মনে রাখা হয়। থ্রি ইডিয়টসের জন্য ৩টি পুরস্কার পেয়েছেন বোমান। তিনি সেরা ভিলেনের জন্য স্টার স্ক্রিন পুরস্কার, সেরা পার্শ্ব অভিনেতার জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং নেতিবাচক ভূমিকায় সেরা অভিনয়ের জন্য আইফা পুরস্কারে ভূষিত হন।
Comments are closed.