বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নেই। সূর্যকান্ত মিশ্র না সেলিম কে ব্রিগেডে শেষ বক্তা, প্রশ্ন সিপিএমের অন্দরে, সংশয়ে বিমান
দু’ঘন্টা সময়, ৯ জন বক্তা। ৮-৯ লক্ষ মানুষের লক্ষ্যমাত্রা। এই নিয়ে আগামী রবিবার বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশ। কিন্তু ৯ জনের মধ্যে শেষ বক্তা কে, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সিপিএম নেতাদের মাথায়। রবিবার দুপুরে ব্রিগেডে শেষ বক্তা কে হবেন তাই এখন সিপিএম নেতাদের একমাত্র কৌতূহলের বিষয়, দলের মধ্যে বড় প্রশ্ন।
গত কয়েক বছর ধরেই ব্রিগেডে বামেদের কিংবা সিপিএমের সমাবেশে শেষ বক্তা ছিলেন অবধারিতভাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শেষ ব্রিগেডে অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মূল বক্তা না থাকলেও তিনিই ছিলেন সমাবেশের সভাপতি এবং তিনিই শেষে বলেছিলেন। এবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ব্রিগেডে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
সিপিএমের নেতৃত্বে বামেদের আগামী রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশে বক্তা ৯ জন। সিপিএমের চার বক্তা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য এবং সাংসদ মহম্মদ সেলিম এবং আদিবাসী নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম। সিপিআই দলের পক্ষে বক্তা দু’জন, সুধাকর রেড্ডি এবং কানহাইয়া কুমার। এছাড়া বলবেন ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামী এবং সিপিআইএমএল লিবারেশনের পক্ষে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে, এর বাইরে সভার শুরুতে সামান্য বলবেন সভাপতি বিমান বসু। তারপর পরপর বলার কথা সুধাকর রেড্ডি এবং দেবব্রত বিশ্বাসের। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করছে, এই ৯ জনের মধ্যে জনসভা, বিশেষ করে ব্রিগেডের মতো বহু মানুষের সমাবেশের নিরিখে এবার স্টার বক্তা ৩ জন। সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম এবং কানহাইয়া কুমার। তাঁদের বলার অর্ডার কীভাবে ঠিক করা হবে এখন তা নিয়েই ভাবনা-চিন্তা করছেন বিমান বসুরা।
ব্রিগেড প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার সকালে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসেছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক। সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে সিপিএম ব্রিগেড সমাবেশের জন্য ৮ লক্ষ মানুষের জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তার নিরিখে বুধবার সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনার পর সিপিএম নেতৃত্ব আশাবাদী, তার থেকে বেশি লোক ব্রিগেডে আসবেন। আর সেখানেই আলিমুদ্দিনের সবচেয়ে বড় চিন্তা এই জমায়েতকে শেষ পর্যন্ত মাঠে বসিয়ে রাখা। কারণ, গত ১৯ শে জানুয়ারি তৃণমূলের ডাকে ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশের পর সিপিএম বারবারই দাবি করেছে, মঞ্চ ভরলেও, মাঠ ভরেনি। সিপিএম নেতৃত্বও ভালোই জানেন, ব্রিগেডের মতো বড় মাঠে টানা ৩-৪ ঘন্টা লোককে একইভাবে বসিয়ে রাখা সহজ নয়। বিশেষ করে বক্তা এবং ভাষণের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে মিটিং শেষ হওয়া পর্যন্ত মানুষের বসে থাকা।
সিপিএম ঠিক করেছে, শুরুর দিকেই বলবেন সীতারাম ইয়েচুরি। সমাবেশকে চাঙ্গা রাখতে মাঝামাঝি বলবেন কানহাইয়া কুমার। মাঝখানে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, ক্ষিতি গোস্বামী এবং দেবলীনা হেমব্রম। আর একদম শেষে থাকবেন সূর্যকান্ত মিশ্র এবং মহম্মদ সেলিম। কিন্তু এই দুজনের মধ্যে কে হবেন ৩ রা ফেব্রুয়ারির ব্রিগেডে শেষ বক্তা এখনও তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার নিরিখে সূর্যকান্ত মিশ্ররই শেষ বক্তা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু ২০১৫ সালের ব্রিগেডে মহম্মদ সেলিমের বক্তৃতা যেভাবে পুরো ব্রিগেডকে উজ্জীবিত করেছিল, তাতে তাঁকেও শেষ বক্তা হিসেবে রাখার একটা ভাবনা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মাথায় আছে। শেষ পর্যন্ত কে শেষে বলবেন, তা কত মানুষ আসবেন, তার মতোই একটা চিন্তার ব্যাপার এই মুহূর্তে আলিমুদ্দিনের কাছে। সিপিএম নেতৃত্ব চাইছেন, দু’ঘন্টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে ফেলতে। দুপুর ১ টায় সমাবেশ শুরু, তা যেন কোনওভাবেই সওয়া ৩ টে ছাড়িয়ে না যায় তাই ঠিক করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা। বক্তাদের জন্য গড়ে ৭ থেকে ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। সূর্যকান্ত মিশ্র এবং মহম্মদ সেলিম একটু বেশি বলবেন বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু এই দু’জনের মধ্যে কে শেষে বলবেন, তা নিয়ে এখনও ভিন্ন মত রয়েছে দলের অন্দরে।
Comments are closed.