ভেনেজুয়েলায় রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সে দেশের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গাইডোর পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। দু’দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যুইট করেন, নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে ভেনেজুয়ালার মানুষ স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন। গাইডোর নেতৃত্বে এগিয়ে যাক ভেনেজুয়েলা। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট মাদুরো দাবি করেছেন, তাঁকে খুন করার চক্রান্ত করছে আমেরিকা। বিরোধী নেতা হুয়ান গাইডোও সেই ষড়যন্ত্রে সামিল।
মার্ক্সবাদী সংগঠন ‘সোশ্যালিস্ট অ্যাপিল’ এর মুখপত্রে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমেরিকার এই আগ্রাসনের কড়া সমালোচনা করলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জর্জ মার্টিন। তিনি লেখেন, নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে মানুষকে খেপিয়ে তুলে ভেনেজুয়েলার কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে আমেরিকা। এই সাম্রাজ্যবাদী প্রয়াস গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জর্জ মার্টিন।
তিনি লিখেছেন, গত ২৬ শে জানুয়ারি মার্কিন প্রশাসন অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানির নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে সে দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলতে চেয়েছে। জর্জ মার্টিন মনে করছেন, এটা আমেরিকার কূটনৈতিক কৌশল। ভেনেজুয়েলার মানুষ যাতে মাদুরো সরকারের প্রতি আরও খেপে ওঠে তারই ষড়যন্ত্র করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, আমেরিকা প্রতিদিন ৫ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি করে ভেনেজুয়েলা থেকে। আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কোনও মার্কিন কোম্পানি আর ভেনেজুয়েলা থেকে তেল আমদানি করতে পারবে না। অর্থাৎ, ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির সর্বাধিক ক্ষতি সাধন করাই আমেরিকার লক্ষ্য। এর ফলে, সরকার বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
তেল পরিশোধন করতে ন্যাপথা ও গ্যাসের জন্য আমেরিকার ওপর নির্ভর করত ভেনেজুয়েলা। প্রায় ৮০ শতাংশ ন্যাপথা ও ফুয়েল তারা আমেরিকা থেকে আমদানি করত। সে পথও বন্ধ করে দেওয়ার ফলে, আফ্রিকার ওপর নির্ভর করতে হবে ভেনেজুয়েলাকে। নাহলে বাধ্য হতে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমিয়ে দিতে।
জর্জ মার্টিন লিখেছেন, ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী এখনও মাদুরোর পক্ষে। তাই তাদেরও ফুঁসলে গাইডোর দিকে আনার জন্য চলছে ষড়যন্ত্র। আমেরিকা পরিকল্পনা মাফিক ভেনেজুয়েলায় আগ্রাসন চালাচ্ছে। প্রথমে তাদের অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে দেওয়া, তারপর সেনাবাহিনীকে সরকারের বিপক্ষে নিয়ে নিজেদের পছন্দ করা গাইডোকে প্রেসিডেন্ট করার ছক করেছে আমেরিকা।
অন্যদিকে, স্পেনের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন ৮ দিনের মধ্যে ভেনেজুয়েলার সাধারণ নির্বাচন না হলে তাঁরা বিরোধী নেতা হুয়ান গাইডোকে প্রেসিডেন্ট বলে স্বীকৃতি দেবেন। যেহেতু, কেউই আমেরিকাকে চটাতে চায় না তাই আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়াও গাইডোকেই প্রেসিডেন্টের মর্যাদা দিয়েছে।
তবে, রাশিয়া ও চীন মাদুরো সরকারকেই রক্ষা করতে চাইছে নিজেদের স্বার্থে। কারণ, হুইডো প্রেসিডেন্ট হলে ভেনেজুয়েলায় একচেটিয়া ব্যবসা করবে আমেরিকা।
তবে মাদুরো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মার্কিনী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন লেখক জর্জ মার্টিন। তাঁর মতে, ফলাফল কী হবে তা না ভেবে গণতন্ত্র বাঁচাতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
Comments are closed.