রাফাল নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে সমান্তরাল আলোচনা করেছিল ‘পিএমও’, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের চিঠির সূত্র ধরে খবর ‘দ্য হিন্দু’তে, সরব কংগ্রেস
রাফাল যুদ্ধ বিমান নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে ‘সমান্তরালভাবে আলোচনা’ চালিয়েছিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অফিস। এমনই দাবি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রিপোর্টে। ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের হস্তক্ষেপ চায়নি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ২০১৫ সালের একটি নোট তুলে ধরে এমন দাবি করেছে সর্ব ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’।
গত ২০১৫ সালের ২৪ শে নভেম্বর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কররের নজরে আসে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থাকা সত্বেও রাফাল প্রসঙ্গে সমান্তরালভাবে ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস (পিএমও)। এরপর, এই বিষয়ে একটি চিঠিও লেখেন প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি জি মোহন কুমার। তিনি লেখেন, রাফাল প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে পদক্ষেপ করছে তার উল্টো পথে হাঁটছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। প্রতিরক্ষা সচিব জি মোহনের লেখা সেই নোটে বলা হয়, যুদ্ধ বিমান কেনা সংক্রান্ত আলোচনা থেকে বাইরে থাকা উচিত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের। পাশাপাশি এই ডিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের যদি সংশয় থাকে তাহলে তাদের আলাদা করে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে দাবি করা হয় ওই চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, রাফাল ডিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কোনও ভূমিকা ছিল না। সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল এবিষয়ে আলোচনা করে এগিয়েছিল।
‘দ্য হিন্দু’ সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক এন রাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিস যে সমান্তরালভাবে রাফাল প্রসঙ্গে ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছিল, এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরেই আনেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের এই আচরণ আদালত অবমাননার সামিল বলে মনে করেছেন এন রাম।
‘দ্য হিন্দু’র এই প্রতিবেদন সামনে আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘দ্য হিন্দু’র রিপোর্টে পরিষ্কার, প্রধানমন্ত্রী নিজে ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল নিয়ে সমান্তরাল আলোচনা চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের তরুণ ও সেনা বাহিনীর জানা উচিত, রাফাল যুদ্ধ বিমান তৈরি করতে ৩০ হাজার কোটি টাকা অনিল আম্বানীকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কয়েকদিন আগেই গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মনোহর পারিক্কর তাঁকে জানিয়েছেন, রাফাল ডিল পরিবর্তন করা হয়েছিল। এবং সেই আলোচনা বোর্ডে মনোহর পারিক্করকে রাখেননি প্রধানমন্ত্রী। যদিও রাহুলের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁদের মধ্যে এবিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। কংগ্রেস সভাপতি মিথ্যে বলছেন। এই বিষয়ে পারিক্কর একটি খোলা চিঠিও লিখেছিলেন রাহুল গান্ধীকে। যদিও কংগ্রেস সভাপতি এর প্রতিক্রিয়ায় একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। সেখানে পারিক্করকে খোঁচা দিয়ে রাহুল লেখেন, তাঁদের ওই আলোচনা পুরোপুরি খোলসা করেননি তিনি। অসুস্থ মনোহর পারিক্করের প্রতি তাঁর সমবেদনা রয়েছে এবং তিনি জানেন, চাপে পড়েই এই চিঠি লিখেছেন তিনি।
Comments are closed.