‘ভালো হয়েছে তবে আরও ভালো করতে হবে’- মনে পড়ে এই জনপ্রিয় সংলাপটির কথা! হ্যাঁ , সেই বিশেষ মানুষটি সবার কাছে অতি আদরের পরাণ দা। বুড়ো থেকে ছোট, সবাই তাকে এই নামেই ডাকেন। তিনিও সারা দেন সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে। বলা হচ্ছে টলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। ৮২ নট আউট তবুও মনে মনে এখনও নব্য যুবক। পাঁচ মাস বয়স থেকে পিসির স্তন্যপান করেই বড় হয়েছি। তিনিই আমার মা। এভাবেই নিজের ছেলেবেলার স্মৃতিচারণা করেছেন অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, ১৯৪০ সালের ১৮ই অক্টোবর বাংলাদেশের যশোর জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর ছোটবেলার জীবন কাহিনী খুব করুণ যা শুনলে আপনার চোখে জল চলে আসবে। খুব অল্প বয়সেই পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মাকে হারান। সেই শোক ভুলতে না পেরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান বাবা। খুব ছোট বয়সেই বাবা মাকে হারিয়ে অথৈ জলে পড়ে যান পরাণ বাবু।
তাঁর বিপদের খবর পেয়ে ছুটে আসেন তাঁর পিসি আর তাঁকে নিয়ে চলে আসেন নিজের বাড়ি দমদমে। সেখানেই কষ্টেসৃষ্টে মানুষ হতে থাকেন পরাণ বাবু। সিটি কলেজ থেকে পড়াশোনা করার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তবে সেই সঙ্গে ছিল তার অভিনয়ের নেশা। এরপর ধীরে ধীরে গণনাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
পরাণ বন্দোপাধ্যায়ের কথায়, “জেলায় জেলায় ঘুরে আইপিটিএ-র থিয়েটার করতাম। অফিসের ছুটি ফুরিয়ে যেত। মাসে সতেরো আঠেরো দিনের মাইনে পেতাম। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীর ভাব-ভালবাসা করে বিয়ে। ফলে সেই যুগে… অনেকেরই যা হয়েছে আরকী… পরিবারের থেকে প্রথমেই আলাদা। আমার মিসেস জুনিয়র স্কুলের শিক্ষকতা করতেন। মাস তিন-চারেক বাদে বাদে সামান্য মাইনে। সংসারে টানাপড়েন লেগেই থাকত। কারও কাছে হাত পাতার অভ্যেস ছিল না। সংসার চালাতে বউয়ের গয়নাও বন্ধক দিতে হয়েছে”।
পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় চাকরিতেও ঢুকেছিলেন। ২০০০ সালে অবশেষে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তারপর নিজের সম্পূর্ণ সময় অভিনয়ের পেছনেই সমর্পন করলেন। নিয়মিত বড়পর্দায় কাজ করে গিয়েছেন। কমেডিয়ান অভিনেতা হিসেবে তার পদ টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে পাকাপোক্ত জায়গা করে নেন।
Comments are closed.