সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চে পরপর মামলায় আদানি গোষ্ঠীর জয়! বেনামী চিঠিকে কেন্দ্র করে উত্তাল সর্বোচ্চ আদালত
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী দিল্লিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে একটি বেনামী চিঠি। দু’পাতার সেই বেনামী চিঠি কোনওদিন পৌঁছে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অফিসে। আবার কখনও একই বেনামী চিঠির কপি পাওয়া যাচ্ছে সিনিয়র আইনজীবীদের চেম্বারে।
কী আছে সেই চিঠিতে? নিউজ পোর্টাল নিউজক্লিকের হয়ে সিনিয়র সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা এবং সাংবাদিক আবীর দাশগুপ্ত সেই বেনামী চিঠির তথ্য তালাশ করেছেন। যা জন্ম দিয়েছে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের। সেই প্রশ্ন আবর্তিত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্রকে কেন্দ্র করে।
নিউজ পোর্টাল নিউজক্লিকের প্রতিবেদন বলছে, ওই বেনামী চিঠিতে মোট ৮ টি মামলার কথা বলা আছে, যে মামলাগুলো শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রতিটি মামলার সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার যোগ রয়েছে। এবং প্রতিটি মামলারই শুনানি হয়েছে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সবকটি মামলাতেই রায় গিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে।
বেনামী চিঠিতে বলা হয়েছে, এই সিরিজে আর মাত্র একটি মামলাই রয়েছে যার রায়দান বাকি। দ্রুতই আদালত রায় শোনাবে বলে মনে করা হচ্ছে বলে দাবি নিউজক্লিকের প্রতিবেদনে। বেনামী চিঠিতে বলা, অষ্টম মামলাটির অন্যতম পার্টি আদানি গোষ্ঠী। জুলাই মাসে মামলার শুনানি পর্ব শেষ হয়েছে।
২ সেপ্টেম্বর অবসর নিচ্ছেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র। মনে করা হচ্ছে, আদানি গোষ্ঠী সংক্রান্ত অষ্টম মামলাটির রায়দানও হয়ে যাবে এর মধ্যেই। গত ৭ বছর ধরে চলা সেই মামলায় গত ২৯ জুলাই শুনানি শেষ হয়, রায়দান স্থগিত আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অষ্টম মামলাতে আদানি গ্রুপ জয় পেলে, অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়বে সরকারি সংস্থা।
কিন্তু বিচারপতিকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণ কী? নিউজক্লিকের প্রতিবেদনে আছে সেই উত্তরও। ১৯৯৯ সালে বিচারপতি হিসেবে অরুণ মিশ্র যোগ দেন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে। তারপর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৪ সালে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ঘটনাচক্রে সেই সময়ই মোদী সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসে। জানা যায়, ২০১৪ সালের আগে একবার বিচারপতি মিশ্রকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের প্রক্রিয়া গতি পেয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। সেই সময় ক্ষমতায় মনমোহন সিংহের ইউপিএ সরকার।
নিউজক্লিকের প্রতিবেদনে সাংবাদিকরা বিশ্লেষণ করেছেন অরুণ মিশ্রের বেঞ্চে থাকা মামলাগুলোর গতিপ্রকৃতি নিয়ে। এই প্রসঙ্গেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দুষ্মন্ত দাভের একটি চিঠির কথা। আদানি গোষ্ঠীর নামোল্লেখ করে যে চিঠিটি দাভে পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতিকে। তার কপি দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেক বিচারপতিকে। চিঠিতে বিচার বিভাগের পরিচালন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলেন দাভে। কীভাবে পরপর মামলার রায় আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে যাচ্ছে, তা নিয়েও নিজে অবাক হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন ঘটনা ধরে ধরে দাবি করা হয়েছে, কোন কোন মামলার কোন রায়ে আপত্তির অবকাশ রয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী দাভের চিঠিতেও একই মামলার কথা বলা হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মামলায় রায় ঘোষণার অপেক্ষা। এই সংক্রান্ত মামলায় আগের ল্যান্ডমার্ক জাজমেন্টের উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারপতি অরুণ মিশ্র যদি সেই জাজমেন্টকেই বহাল রাখেন তাহলে এই প্রথমবার ধাক্কা খাবে আদানি গোষ্ঠী। আর এবারও আদানি গোষ্ঠীর জয় হলে সরকারি সংস্থাকে ৫ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে আদানি পাওয়ারকে।
Comments are closed.