ছত্তিসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ায় কি ফিরছে ওড়িশার নিয়মগিরি? দান্তেওয়াড়া জেলার বায়লাডিলার একটি পাহাড়কে ভগবানরূপে পুজো করেন স্থানীয় আদিবাসীরা। সেই ‘ডিপোজিট ১৩’ বা আদিবাসীদের আরাধ্য ‘নন্দরাজ পাহাড়’কে কেন্দ্র করেই ১০ মিলিয়ন টন বাৎসরিক উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন লৌহ ইস্পাত খনি তৈরি করতে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। এই প্রকল্পের সর্বাত্মক বিরোধিতায় সরব হয়েছেন ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার আদিবাসী। সংযুক্ত পঞ্চায়েত জন সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে মঙ্গলবারও হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ বায়লাডিলার ন্যাশনাল মিনারেল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন বা এনএমডিসির কিরান্ডুলের চেকপোস্ট ঘেরাও করেন। এই নিয়ে পরপর চার দিন সম্পূর্ণ বন্ধ বায়লাডিলা প্রকল্পের কাজ।
প্রবল তাপদাহকে উপেক্ষা করে প্রকল্প এলাকা ও আশেপাশের অন্তত ২০০ টি গ্রামের বাসিন্দা কাঁধে তির-ধনুক ঝুলিয়ে এগিয়ে চলেছেন নন্দরাজ পাহাড়ের দিকে। মুখে তাঁদের প্রতিরোধের গান। এখন এই বিক্ষোভেই ঘুম ছুটেছে ছত্তিসগঢ় প্রশাসনের।
আদানি গোষ্ঠীর খনি প্রকল্পের বিরোধিতা করে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে আদিবাসীদের বিক্ষোভ। দান্তেওয়াড়া ছাড়াও পাশ্ববর্তী সুকমা, বিজাপুর জেলা থেকেও প্রচুর সংখ্যায় আদিবাসী মানুষ জড়ো হয়েছেন এই বিক্ষোভ সমাবেশে। তাঁদের দাবি, হাঁসদেও আরান্ড এলাকায় খনন কাজ বন্ধ করতে হবে এবং সর্বোপরি আদানি গোষ্ঠীকে দেওয়া খনির বরাত বাতিল করতে হবে। যদিও আদানি গোষ্ঠী এবং ছত্তিসগঢ় সরকারের বক্তব্য, পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত ছাড়পত্র দেওয়ার পরই প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। আদিবাসী এলাকায় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল স্থানীয় গ্রাম সভার সম্মতি। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি গ্রাম সভাই প্রকল্পের কাজে সম্মতি দিয়েছে বলে দাবি ছত্তিসগঢ় সরকারের।
আর এখানেই প্রশ্ন তুলছেন ছত্তিসগঢ়ের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় পারাতে। ছত্তিসগঢ়ের সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দাবি, পুরোটাই ধাপ্পাবাজি। একটি গ্রাম সভাও এই প্রকল্পের কাজে সম্মতি দেয়নি। যে গ্রাম সভার সম্মতি পত্র সরকারের তরফে দেখানো হচ্ছে, তাতেও কারচুপি রয়েছে বলে দাবি এই সিপিএম নেতার। বিক্ষোভকারী আদিবাসীদের বক্তব্য, আদানি গোষ্ঠীকে খনি তৈরি করতে দেওয়া হলে অরণ্য বিপন্ন হয়ে পড়বে, তার সরাসরি প্রভাব এসে পড়বে আদিবাসীদের জীবন জীবিকার উপর। যা মৃত্যু পরোয়ানারই নামান্তর বলে মনে করছেন তাঁরা। তাই রাজ্যের কংগ্রেস সরকার যতক্ষণ প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা না করবে, ঘেরাও-বিক্ষোভ-আন্দোলন চলবে, জানিয়ে দিচ্ছেন জমায়েতের আদিবাসীরা।
২০০৮ সালে ন্যাশনাল মিনারেল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন বা এনএমডিসি, ছত্তিসগঢ় মিনারেল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন বা সিএমডিসির সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ নেয়। ২০১৫ সালে এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে তৈরি হয় নতুন সংস্থা এনসিএল। ঠিক হয়, এলাকার ৪১৩.৭৪ হেক্টর জমিতে ছড়ানো ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন লৌহ ইস্পাত উত্তোলন করা হবে। এই এলাকার মধ্যেই পড়ে ডিপোজিট ১৩ বা আদিবাসীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র নন্দরাজ পাহাড়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, কেবলমাত্র ডিপোজিট ১৩ এই গচ্ছিত আছে ৩২৬ মিলিয়ন টন অত্যন্ত উচ্চ শ্রেণির লৌহ ইস্পাত। তাই খনি তৈরি করতে এই পাহাড় অধিগ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন এনসিএলের। এই উদ্দেশে একটি গ্লোবাল টেন্ডার ছাড়া হয়। ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে ১০ টি সংস্থাকে পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ বিড করে প্রকল্পের বরাত পায় আদানি গোষ্ঠী। সেই খনি প্রকল্প ঘিরেই এখন বিক্ষোভের কালো মেঘ দান্তেওয়াড়ার আকাশে।
Comments are closed.