লং মার্চে পুলিশি বাধা, মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় জোর করে আটকানো হচ্ছে নাসিকমুখী কৃষকদের, অভিযোগ হান্নান মোল্লার
কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নাসিক থেকে মুম্বই, মহারাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফায় কৃষকদের লং মার্চ শুরুর আগেই কাটল তাল। নাসিকের মুম্বই নাকা ময়দান থেকে বিকেল চারটেয় পদযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও প্রশাসন তাতে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়েছিল। প্রশাসনের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই পদযাত্রার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন কিষাণ সভার নেতারাও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মহারাষ্ট্রের থানে, পালঘর সহ বিভিন্ন জেলা থেকে লং মার্চে যোগ দিতে আসা কৃষকদের একের পর এক গাড়ি প্রশাসন মাঝ রাস্তায় আটকে দিয়েছে বলে অভিযোগ সারা ভারত কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার। লং মার্চে যোগ দিতে আসার পথে আটকে পড়া কৃষকরা নাসিকে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন বলে সারা ভারত কিষাণ সভা সূত্রে দাবি।
হান্নান মোল্লা বলেন, ‘প্রশাসন আগের লং মার্চ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছে, তাই দমননীতির মাধ্যমে সর্বত্র আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কৃষকদের দাবি পূরণ না হলে ফের রাস্তায় নামা ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে? প্রশাসনের চূড়ান্ত অসহযোগিতা সত্ত্বেও তাই ফের রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকরা। যেখানে আমাদের বাধা দেওয়া হবে আমরা সেখানেই বসে পড়ব, পিছু হঠার প্রশ্ন নেই।’ মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পর কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ হান্নান মোল্লার।
গোটা বিশ্ব যখন ভালবাসার উদযাপনে ব্যস্ত তখনই এক নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল ভূস্বর্গ। পুলওয়ামায় ফিদায়েঁ হামলার অভিঘাতে কেঁপে উঠেছিল সারা দেশ। তারপর থেকে দেশে তৈরি হয়েছে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। নক্কারজনক জঙ্গি হামলার পর দেশবাসীর ক্ষোভ অত্যন্ত সঙ্গত। কিন্তু দেশপ্রেম প্রকাশের ঠেলায় ইতিউতি ঘটে যাচ্ছে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও। এই প্রেক্ষাপটেই ফের পথে নামার সিদ্ধান্ত দেশের অন্নদাতাদের। গত বছরের মার্চে এক অভূতপূর্ব সমাবেশ দেখেছিল দেশবাসী। নিজেদের দাবিদাওয়া পূরণে পথে নেমেছিলেন লক্ষ লক্ষ কৃষক। লাল প্লাবনে ভেসে গিয়েছিল বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের রাজপথ। নাসিক থেকে কৃষকরা দাবি আদায়ে সমবেতভাবে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছেছিলেন রাজ্যের রাজধানী মুম্বই। লক্ষ্য ছিল বিধানসভা ভবন ঘেরাও। যদিও ফড়নবিশ সরকার দাবির একাংশ মেনে নেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ফিরে গিয়েছিলেন কৃষকরা। সরকারি প্রতিশ্রুতির পর কেটে গিয়েছে গোটা একটা বছর। কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি পালন তো দূর অস্ত, কোনও দাবি মানারই বাস্তব বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। ফলশ্রুতি হিসেবে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ফের মুম্বইয়ের উদ্দেশে আরও বড় লং মার্চ শুরু করার কর্মসূচি নিয়েছেন কৃষকরা। ১৮০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কৃষকদের পদযাত্রা ২৭ ফেব্রুয়ারি পৌঁছনোর কথা মুম্বই। তারপর সেখানে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ঘেরাও করা হবে বলে কৃষক সংগঠন সূত্রের খবর। কৃষিঋণ মকুব, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি এবং কৃষকদের জন্য পেনশন প্রকল্পের দাবি নিয়ে মহারাষ্ট্রের ২৩ টি জেলা থেকে অন্তত ৫০ হাজার কৃষক দলবেধে রওনা দেবেন নাসিক থেকে মুম্বইয়ের উদ্দেশে। এর পাশাপাশি খরা কবলিত এলাকায় একর প্রতি ৪০ হাজার টাকা করে অনুদানেরও দাবি তাঁরা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশের কাছে।
কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার যে আসলে কৃষকদের দাবির প্রতি কোনও সহানুভুতিই রাখেন না, দমননীতির আশ্রয় নিয়ে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে কৃষকরা পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবেন মুম্বইয়ের উদ্দেশে, বলেই মনে করছেন সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা।
Comments are closed.