‘সুপার ৩০’ র প্রতিষ্ঠাতা ও বিহারের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ আনন্দ কুমারকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করল আমেরিকা। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান, দুঃস্থ ও মেধাবীদের পড়াশোনায় তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৯ সালের এডুকেশন এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হল ‘সুপার ৩০’ র প্রতিষ্ঠাতাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে ফাউন্ডেসশন ফর এক্সেলেন্সের (এফএফই) রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে বিহারের গণিতজ্ঞ আনন্দ কুমারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আনন্দ কুমার বলেন, সমাজে দারিদ্র, বেকারত্ব, জনবিস্ফোরণের মতো সমস্যাই থাকবে না, যদি প্রত্যেকেই উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ পান। বলেন, বর্তমান দিনে যে অভাব ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই মোচন হতে পারে। তাই সবার পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ পাওয়া খুব জরুরি। আমেরিকার এফএফইর দেওয়া পুরস্কার হাতে নিয়ে পাটনার গণিতজ্ঞ বলেন, শিক্ষার সুযোগের চেয়ে গৌরবের পুরস্কার আর কোনও কিছুই নয়।
বিহারের পাটনায় এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আনন্দ কুমারের। অসাধারণ মেধাবী আনন্দের ছোট থেকেই ছিল গণিতে প্রবল আগ্রহ। পাটনার সরকারি স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা করেও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাবার মৃত্যু আর নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটে কেমব্রিজে যাওয়ার সুযোগ অধরাই থেকে যায়। তাঁর ‘নাম্বার থিয়োরি’ প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের বিখ্যাত ম্যাথামেটিকাল স্পেকট্রাম ও দ্য ম্যাথামেডিকাল গেজেটে। কিন্তু পেট চালাতে এই আনন্দ কুমারকে মায়ের সঙ্গে পাঁপড় বেচতে হয়েছে। টিউশনি পড়িয়েছেন। কিন্তু একটা সময় তাঁর মতো দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মেধাবীদের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা নেন আনন্দ কুমার। এভাবেই তৈরি হয় তাঁর ‘সুপার ৩০’।
গত ১৮ বছর ধরে প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের বিনামূল্যে আইআইটি-জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন আনন্দ কুমার। ২০০২ সালের পর থেকে প্রতি মে মাসে একটি অ্যাডমিশন টেস্ট নেন আনন্দ কুমার। সেখান থেকে প্রথম ৩০ জন সুযোগ পান আনন্দের কোচিংয়ে পড়ার।
আনন্দ কুমারের কোচিং ক্লাসের সাফল্যের খতিয়ানও নজরকাড়া। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৮০ জনের মধ্যে ৪২২ জন ‘সুপার ৩০’ এর পড়ুয়া আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। গণিতজ্ঞ আনন্দ কুমারের জীবন অবলম্বনে সিনেমাও তৈরি হয়েছে। গত জুলাই মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত সুপার ৩০ সিনেমায় আনন্দ কুমারের ভূমিকায় অভিনয় করেন হৃতিক রোশান।
আনন্দ কুমারের কথায়, তাঁর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেখেছেন, একজনের সাফল্য কেবল তাঁর পরিবারকে নয়, একটা গোটা সম্পদায়কে নতুন করে আশার আলো দেখাতে পারে। এখান থেকেই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়।
Comments are closed.