বিশ্বভারতী থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর চলছে। ভালবাসেন রান্না করতে। আর সেই ভালোবাসাই গৃহবন্দি কোভিড সংক্রমিতদের বাড়িতে খাওয়ার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগের সামনে এনে ফেললো। বেহালার অনন্যা ব্যানার্জি এই প্রয়াসের নাম রেখেছেন ‘সুগন্ধ’।
কথায় কথায় জানালেন, কোভিড সংক্রমিতদের ঘ্রাণ শক্তি লোপ পায়। অন্যদিকে খাওয়ারের গন্ধ মানেই তা ‘সুগন্ধ’! দ্রুত যাতে কোভিড রুগীরা ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পান সেই শুভকামনা থেকেই অন্যন্যা তাঁর এই আয়োজনের নাম রেখেছেন ‘সুগন্ধ’।
সম্প্রতি কাছের এক বন্ধুর পরিবার করোনা সংক্রমিত হয়েছিল। বন্ধুর মা পজেটিভ থাকাকালীন রান্না করতে গিয়ে গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনাটি নাড়া দিয়েছিল তাঁকে, সেখান থেকেই ঠিক করেন এই দুর্যোগের সময় সহ নাগরিকের পাশে দাঁড়াবেন। ‘সুগন্ধ’ শুধুমাত্র গৃহবন্দি থাকা মানুষদের খাওয়ার পৌঁছে দেবে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ক্লাসের ফাঁকে একা হাতেই ১৫ থেকে ২০ জনের জন্য রান্না করছেন অন্যন্যা। বাজার, সবজি কোটা, রান্না সবটা মিলিয়ে দিনে অনেকগুলো ঘন্টা সময় ব্যয় করছেন গৃহবন্দীদের দরজায় দরজায় খাওয়ার পৌঁছে দিতে।
হোম ডেলিভারি করতে গিয়ে এই এক সপ্তাহ হরেকরকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে অন্যন্যার। বললেন, বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, অনেকে ফোন করে কেঁদে ফেলছেন! করোনা সংক্রমিত হওয়ায় কোনও হোম ডেলিভারি সার্ভিস তাঁদের খাওয়ার পৌঁছে দিচ্ছে না। শহরে কত বয়স্ক মানুষ একা থাকেন, তাঁদের কথাটা ভাবুন একবার! অনন্যার মন্তব্য, আসলে আমরা একটা অসহায় সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, এই সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতেই হবে।
প্রথম যখন বাড়িতে নিজের ইচ্ছের কথা বলেছিলেন মা রাজি হননি। একটাই ভয়, করোনা পেশেন্টদের খাওয়ার পৌঁছতে গিয়ে যদি মেয়ে সংক্রমিত হয়! পরে অনেক বুঝিয়ে বাড়ির লোককে রাজি করিয়েছেন অনন্যা।
১০০ টাকার বিনিময়ে নিরামিষ থালি। মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, তরকারি, ভাজা ভুজির সঙ্গে মিষ্টি, দই প্রভৃতি। আমিষ থালিতে থাকছে অন্যান্য পদের সঙ্গে মাছ অথবা মাংস। খরচ পড়বে ১৩০ টাকা।
আপাতত বেহালা ও সংলগ্ন এলাকার জন্য অন্যন্যা এই পরিষেবা শুরু করেছেন। ইচ্ছে আছে প্রয়োজন অনুসারে তা আরও ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু এমএ পড়ুয়া অনন্যার কাছে এই মুহূর্তে মূল সমস্যা অর্থের। এখনও পড়াশোনা করছেন, তাই আলাদা কোনও স্থায়ী রোজগার নেই। স্রেফ নিজের জমানো টাকা আর সম্বল করে নেমে পড়েছিলেন। সঞ্চয় ফুরিয়েছে।
অনন্যা জানান, মূলত লোকবল এবং মূলধনের অভাবে আপাতত কিছুদিন বন্ধ রাখছেন ‘সুগন্ধ’। তবে তিনি আশাবাদী। বাধা কাটিয়ে আবারও নাকে এসে ঠেকবে ‘সুগন্ধ’।
হাসতে হাসতে বললেন, যতদিন করোনা আমার শহরকে কাবু করে রেখেছে, ততদিন নিজের মত চেষ্টা চালিয়ে যাব শহরবাসীর পাশে থাকার।
প্রবাদ আছে, বিপদে মানুষ চেনা যায়। অতিমারির কলকাতায় এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয় যাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তেমন মানুষদেরই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা। আপনি চেনেন এমন কাউকে? জানান আমাদের।
Comments are closed.