সংসদের দুই কক্ষে বিরোধীদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও আটকানো যায়নি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিজেপি পাশ করিয়ে নিয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। রাষ্ট্রপতির সইও হয়ে গিয়েছে তাতে। এই বিল এখন পরিণত হয়েছে আইনে (Citizenship Amendment Act)। সংসদের ভিতরকার লড়াই শেষ। এবার লড়াই সুপ্রিম কোর্টে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বহু আবেদন জমা পড়ল দেশের শীর্ষ আদালতে। ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে অনেকেই আদালতে গিয়েছেন। আবেদনকারীদের মূল বক্তব্য, যেভাবে এই বিলে মুসলিম ধর্মের লোকেদের বাদ দিয়ে হিন্দু সহ অন্য পাঁচ ধর্মের লোকেদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা অসাংবিধানিক।
এই আইনের (Citizenship Amendment Act) বিরুদ্ধে যারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সহ আরও চার সাংসদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রাক্তন হাইকমিশনার দেব মুখার্জি, প্রাক্তন আইএএস অফিসার সোমাসুন্দর বুড়া, অমিতাভ পাণ্ডে প্রমুখ। এছাড়াও অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসুর তরফেও পিআইএল দাখিল করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। মামলা করেছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অফ মুসলিম লিগ এবং জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের মতো রাজনৈতিক দলও।
মহুয়া মৈত্রের তরফে এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার আবেদন জানানো হয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। দাবি জানানো হয় দ্রুত শুনানির, যদিও দ্রুত শুনানির আবেদন মানেনি শীর্ষ আদালত। তাঁকে রেজিস্টারের কাছে যেতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের আবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের বিরোধী, অসম চুক্তির বিরোধী। রমেশ আবেদনে জানিয়েছেন যেভাবে, এই বিলে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা হয়েছে তা সংবিধান বিরোধী।
আসুর তরফে ক্যাবের ২,৩,৫ ও ৬ নং অনুচ্ছেদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলা হয়েছে, এই আইন অসাংবিধানিক এবং সংবিধানের একাধিক ধারার পরিপন্থী। আসুর দাব্ এই বিল ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তি ও ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের পরিপন্থী।
অন্য একটি আবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু বলে তারা ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হননা বলে বিলে যা বলা হয়েছে তা ভুল। এই আইন সংবিধানের ১৪,২১ ও ১৫ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে। আবেদনে মুসলিম লিগের অভিযোগ, এই বিল বা নতুন আইন সংবিধানের মূল ভাবনার বিরুদ্ধে। সংবিধান বলছে, সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। কিন্তু এই বিলে ছয়টি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বললেও মুসলিমদের বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
Comments are closed.