অবশেষে শিলদা মামলাতেও জামিন মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের, জেলে বসেই সেট পাশের পর এবার নিচ্ছেন পিএইচডির প্রস্তুতি

তাঁর বিরুদ্ধে ছিল মোট ৩১টি মামলা। তার মধ্যে ৩০ টি মামলায় আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। বাকি ছিল কেবল ঝাড়গ্রামের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলার মামলা। বৃহস্পতিবার সেই মামলাতেও জামিন পেলেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। পাশাপাশি বিচারপতির তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় এই মামলার তদন্তকারী পুলিশকে।
জামিন পেলেও অর্ণবের মুক্তি পেতে এখনও দু’একদিন সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। ছেলের মুক্তির খবরে খুশি অর্ণবের বাবা-মাও। ছেলেকে আনতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন অর্ণবের বাবা এস কে দাম। বর্তমানে হুগলি সংশোধনাগারে বন্দি অর্ণব। সাত বছর পর মুক্তি পেতে চলেছেন মাওবাদী নেতা, আইআইটি ড্রপ আউট অর্ণব ওরফে বিক্রম।
এদিন তাঁর জামিনের মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সরকারি আইনজীবীকে। ২০০৯ সালে শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনাটি ঘটে। তারপর কেটে গিয়েছে এক দশক। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির প্রশ্ন, এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারল না পুলিশ? বিচারপতির মন্তব্য, এক্ষেত্রে শিলদা ক্যাম্পে নিহত ২৩ জনের পরিবার, যাঁরা এতদিনেও সুবিচার পেলেন না, তার দায় নেবে কে? ন্যায্য বিচার পেতে আর কতদিন তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে? প্রশ্ন বিচারপতির। পাশাপাশি, আগামী ছ’মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতকে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার জন্যও বলেছে হাইকোর্ট। জামিনের শর্ত অনুযায়ী, অর্ণব দাম তাঁর বাড়ি, সোনারপুর এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। এছাড়াও একদিন অন্তর স্থানীয় থানায় হাজিরা দেওয়ার শর্তও তাঁর উপর আরোপ করেছে হাইকোর্ট।
সম্প্রতি জেলে বসেই স্টেট লেভেল এলিজিবিলিটি টেস্টে (সেট) সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। ২০১২ সালে আসানসোল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে মাওবাদী নেতা অর্ণব ওরফে বিক্রমকে। তারপর থেকে জেলেই রয়েছেন মাওবাদীদের এই তরুণ নেতা। সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি জেল থেকে হুগলি জেলা সংশোধনাগারে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ণবকে। প্রেসিডেন্সি জেলে বসেই আইআইটি ড্রপ আউট অর্ণব একের পর এক পাস করেছেন বিএ, এমএ এবং সর্বশেষ সেট। পিএইচডির বিষয়ও নির্বাচন করে ফেলেছেন অর্ণব। পরিবেশের ইতিহাস নিয়েই গবেষণা করবেন তিনি। পরিবেশ বদলের সঙ্গে সঙ্গে তা কীভাবে মানুষের জীবনের উপর প্রভাব ফেলছে, গবেষণায় তা তুলে ধরতে চান মাওবাদী নেতা বিক্রম, বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূর।
প্রেসিডেন্সি জেলে থাকাকালীন নিয়মিত জেলের অন্যান্য কয়েদিদের পড়াশোনা শেখাতেন এই মাওবাদী নেতা। তার বদলে দৈনিক ৮০ টাকা করে মিলত। যে টাকায় নিজের মামলা ও আইনজীবীদের ফি মেটাতেন অর্ণব। কিন্তু হুগলি জেলে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে সেই শ্রম দেওয়ার সুযোগও বন্ধ। সম্প্রতি মেদিনীপুর আদালতে হাজিরার সময় অর্ণব দাম তাঁর আইনজীবীকে সওয়াল করতে বারণ করে দেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, জেলে শ্রমের বিনিময়ে টাকা উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়াকে। তবে এবার মুক্ত। পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই গবেষণায় ডুব দিতে চান ছেলেবেলায় অঙ্কের জাদুকর নামে পরিচিতি পাওয়া মেধাবী অর্ণব দাম।
তাঁর এই জামিনের ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে রাজ্যের এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Comments are closed.