অসমে বিদেশি খেদাও বা অসম মুভমেন্টের নেতার ঠাঁই নেই এনআরসির খসড়ায়! নাগরিকপঞ্জি খসড়াতে অনেক ভুল নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং বাদও গিয়েছে আসল বাসিন্দাদের নাম , কিছুদিন আগেই তা স্বীকার করেছে কেন্দ্র। তাই নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া তৈরির জন্য সময় চেয়ে গত ১৯ শে জুলাই সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছে মোদী সরকার।
এই প্রেক্ষিতেই সামনে এল এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যাওয়া বছর ৬২ র প্রদীপকুমার বরদোলোইর ঘটনা। সালটা ১৯৭৯। বিদেশি খেদাও আন্দোলনের আঁচে ফুটছে গোটা অসম। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫, দীর্ঘ ৬ বছর আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন এই প্রদীপকুমার বরদোলোই। জেলও খেটেছেন, রক্তও ঝরেছে। এহেন ব্যক্তির নামই বাদ গিয়েছে এনআরসির সাম্প্রতিক খসড়া থেকে। নিজেকে অসমের বাসিন্দা প্রমাণে কয়েক মাস ধরে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন একসময়ের জনপ্রিয় ছাত্র নেতা।
অন্যান্য অসমবাসীর মতো ২০১৫ সালেএনআরসি খসড়ায় নাম তোলার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রদীপকুমার। ইন্টারনেট ক্যাফে থেকে ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছিলেন। প্রমাণ হিসেবে রসিদ পান। কিন্তু ২০১৮ সালে রসিদের নম্বর দিয়ে এনআরসি তালিকা পরীক্ষা করতে গিয়ে চমক। নাম নেই তাঁর! প্রদীপকুমার ভেবেছিলেন হয়তো ফর্ম পূরণের সময় নিজে কোনও ভুল করেছিলেন। তাই অসমের মরিগাঁও জেলার কাগজ মিল থেকে অবসর নেওয়া প্রদীপকুমার দিল্লিতে থাকা ছেলেকে ফোন করে এ ব্যাপারে জানান। কিন্তু ছেলেও দেখেন বাবার নাম নেই। এরপর প্রদীপবাবু ছুটে যান কাছের এনআরসি সেবা কেন্দ্রে। সব শুনে অফিসার আশ্বস্ত করেন, প্রদীপকুমার বরদোলোইয়ের ফর্ম হয়তো ‘ডিজিটাইজড’ হয়নি, পরে হয়ে যাবে। আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন ৬২ বছরের বৃদ্ধ।
কিন্তু সব আবেদনকারীর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এনআরসির ‘ফিল্ড ভেরিফিকেশন’ হল, প্রদীপকুমার বরদোলোইয়ের বাড়িতে কোনও অফিসার যাননি।
এরপর অজস্রবার এনআরসি সেবা কেন্দ্রে হাজিরা দেওয়ার পর তাঁকে নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়। সমস্ত তথ্য দিয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর প্রদীপ বাবু ভেবেছিলেন, অবশেষে হয়েছে। কিন্তু না, বিড়ম্বনায় বাকি ছিল আরও। দেখা যায় তাঁদের সন্তানদের নাম নেই এনআরসির খসড়ায়। এরপর চলতি বছরের মার্চে প্রদীপকুমারের স্ত্রী পিকুমণি বরদোলোইকে তলব করা হয়। তাঁর পৈত্রিক বিষয় সম্পত্তি ও পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ আইনি বাধা টপকে প্রদীপকুমাররা প্রমাণ করেন তাঁরা দীর্ঘকাল ধরে অসমেরই বাসিন্দা। গত ২৯ শে জুলাই প্রদীপকুমার বরদোলোইয়ের স্ত্রীকে ফের তলব করা হয় এনআরসি সেবা কেন্দ্রে। জানানো হয়, এবার সব ঠিকঠাক আছে। এখন বিষয়টি কো-অর্ডিনেটারের অফিসে পাঠানো হচ্ছে।
যদিও এখন নিশ্চিত হতে পারছেন না প্রদীপকুমার বরদোলোই। বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, নিজেও অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে লড়েছেন, তার বিনিময়ে কয়েক মাস ধরে এই বিড়ম্বনা, মানসিক চাপ কি তাঁদের প্রাপ্য? ক্ষোভ ঝরে পড়ে একসময়ের দাপুটে ছাত্রনেতা প্রদীপকুমার বরদোলোইর গলায়।
Comments are closed.