Assam NRC: বাদ ১৯ লক্ষের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা! কেন নাগরিকপঞ্জিতে মহিলারা বেশি সমস্যায়, কী বলছে অসমের পরিসংখ্যান
অসমের নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। সরকারি তরফে আপিল প্রসেস চালু হলে বাদ পড়া ব্যক্তিরা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাবেন। সেখানেই চূড়ান্ত হবে সেই ব্যক্তির নাগরিকত্ব। কিন্তু জানেন কি, অসমের এনআরসি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কার গায়ে? হিন্দু কিংবা মুসলিম, বাঙালি, অসমীয়া কিংবা গোর্খা নয়, বরং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এনআরসিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অসমের মহিলারা। বিশেষত অসমে বিয়ে হয়ে আসা মহিলারা।
পরিসংখ্যান বলছে, অসমে সবচেয়ে বেশি ডি ভোটার (সন্দেহজনক ভোটার) মহিলারা, সবচেয়ে বেশি ঘোষিত বিদেশিও সেই মহিলারাই। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অসম এনআরসির যে আংশিক খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয় তাতে নাম বাদ গিয়েছিল ২৯ লক্ষ বিবাহিত মহিলার। কিন্তু কেন এমন হল?
আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানেই লুকিয়ে এনআরসির প্রবল পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র। তাঁরা বলছেন, নাগরিকপঞ্জির প্রক্রিয়াটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে স্বাভাবিকভাবেই বেশি সমস্যায় পড়ার কথা মহিলাদের, বিশেষত বিবাহিত মহিলাদের। কারণ প্রথমত, গ্রাম-মফস্বল কিংবা শহরে মেয়েদের সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ। এর ফলে নির্ধারিত ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায় বহু মেয়ের। ফলে বাপের বাড়ি ছেড়ে মেয়ে চলে যায় শ্বশুরবাড়ি। আর সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই।
আরও জানতে ক্লিক করুন, এনআরসিতে ঢুকেছে ভয়ঙ্কর জেহাদি সহ ৮০ লক্ষ বিদেশির নাম!
বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে আসার ফলে সেখানেও নিজের উত্তরাধিকার প্রমাণের সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে কম বয়সে বিয়ের দরুণ থাকে না সরকারি স্বীকৃত সার্টিফিকেটও। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেওয়ায় শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখা সরকারি সার্টিফিকেটও পান না তাঁরা, আবার অনেকেই স্কুলে ভর্তিই হন না। মহিলাদের সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার রেওয়াজও নেই। ফলে জমির দলিল দেখানোরও প্রশ্ন ওঠে না। একইভাবে কাগজে কলমে মা-বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। স্বভাবতই তার প্রভাব পড়েছে এনআরসির তালিকায়।
আরও জানতে ক্লিক করুন, রাজস্ব প্রদানের রশিদ বা প্যান নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, জাবেদা খাতুনের মামলায় কী বলল গুয়াহাটি হাইকোর্ট?
এবার আসুন এই সমস্যাকে বোঝা যাক গাণিতিক প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে। এনআরসি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৮০৯ টি নথি পরীক্ষা করতে বিভিন্ন রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই সবকটি নথিই বিবাহিত মহিলাদের। এছাড়াও ৩৭ টি দেশের কাছে ৪০৩ টি নথি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এই নথির বেশিরভাগই গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো, বিহার, রাজস্থানে। মোট ৫,৭২,৮০৯ টি নথি পরীক্ষা করতে পাঠানো হলেও তার মধ্যে মাত্র ১,৭৫,৪৭৯ টি নথি পরীক্ষা হয়ে ফেরত এসেছে।
আরও জানতে ক্লিক করুন, এনআরসিতে নাম তুলতে অসমবাসীর খরচ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা!
বাকি যে বিপুল পরিমাণ নথির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তা সময়মতো পরীক্ষা হয়ে ফিরে না আসায় এই বিপুল সংখ্যক মহিলা এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
Comments are closed.