জিতেন্দ্র তিওয়ারি। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা তৃণমূল থেকে ইস্তফা দেওয়া এই নেতার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেই জল্পনা মিটতে চলেছে। যে জিতেন্দ্রর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে তীব্র আপত্তি করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, যাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করে দলের শো-কজ নোটিস পেয়েছেন সায়ন্তন ব্যানার্জি ও অগ্নিমিত্রা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেই জিতেন্দ্র বিজেপিতেই যোগ দেবেন বলে খবর!
কিন্তু এবার আসানসোলের বিজেপি সাংসদের অবস্থান কী হবে? এ নিয়েই তৈরি হচ্ছে নয়া জল্পনা।
বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে জিতেন্দ্র তিওয়ারি লিখেছিলেন, ‘রাজনীতিতে ফুলস্টপ বলে কিছু হয় না, কমা, কোলনস ও সেমিকোলনস ইত্যাদি থাকে।’ রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও বিজেপি মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রার শো-কজ নোটিস পাওয়ার পরদিনই ছিল এই পোস্ট। একে একে দুই করে জিতেন্দ্রর বিজেপি যোগদান স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে যখন মনে করেছে রাজনৈতিক মহল, ফের ভোলবদল! বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে জিতেন্দ্র লেখেন, ‘আমি দিদির সঙ্গেই ছিলাম, দিদির সঙ্গে আছি, দিদির সঙ্গেই থাকব। যাঁরা এ নিয়ে ধন্দে আছেন তাঁরা আবারও হতাশ হবেন।’ তবে আর ধন্দ নয়। বিজেপি সূত্রের খবর, যাবতীয় ধন্দ, জল্পনা মিটতে চলেছে শীঘ্রই। কারণ, এবার সত্যিই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন জিতেন্দ্র। হয় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নয়ত, চলতি মাসেই বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করছেন আসানসোলের এই নেতা।
এই প্রেক্ষিতে যে প্রশ্ন সবচেয়ে বড় আকার নিচ্ছে, তা হল এখন কী করবেন বাবুল সুপ্রিয়? কীভাবে জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপি প্রবেশ আটকাবেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী? আদৌ পারবেন কি?
আসানসোলে জিতেন্দ্রর অনুগামীর হাতে বিজেপি কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। তাই সপ্তাহ দুয়েক আগে হঠাৎই জিতেন্দ্রর তৃণমূল ত্যাগের খবরে তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। জিতেন্দ্র বিজেপিতেই আসছেন এই আশঙ্কা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্টে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জিতেন্দ্র তিওয়ারি বা আসানসোল- দুর্গাপুরের কোনও নেতা যদি বিজেপি- তে যোগদান করেন তা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারবেন। তিনি আরও জানান, এ নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
এদিকে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি শেষ কবে কোন প্রসঙ্গে একমত হয়েছেন তা মনে করতে পারবেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সেই দিলীপ ঘোষও বাবুলের এই দাবি মেনে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বাবুলকে সমর্থন করেছিলেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও বিজেপির মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পাল। কিন্তু শেষ দু’জন এ নিয়ে মন্তব্য করায় দলের তরফে শো- কজ নোটিস পেয়েছেন। আবার বিজেপির একাংশ মনে করছেন, এই চিঠির মাধ্যমে আসলে দিলীপ ঘোষ এবং বাবুল সুপ্রিয়কেই বার্তা দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। অর্থাৎ, জিতেন্দ্রকে বিজেপি নেওয়া একপ্রকার পাকা করে ফেলেছিল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাতে বাবুল বা দিলীপবাবুদের আপত্তি ওজরে টিকছে না। তাই হয়ত জিতেনকে নিয়ে বাবুলের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অমিত শাহের প্রতিক্রিয়া ছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যা বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এখন দেখার জিতেন্দ্র পাকাপাকি বিজেপিতে এলে কী প্রতিক্রিয়া দেন বাবুল। তার জন্য অপেক্ষা হয়ত আর কয়েকটা দিন।
Comments are closed.